কারাগারে গায়ে হলুদ, গান বাজনা দোষের নয় : স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

asaduzaman-2মনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকা : লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে তাহের পুত্র ভয়ংকর সন্ত্রাসী বিপ্লবের বিয়ে নিয়ে ঢাকায় প্রশাসনে তোলপাড় হওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন, যা হয়েছে তা জেল কোড মেনেই হয়েছে। কারাগারে কয়েদিরা যদি গায়ে হলুদ, একটু গান-বাজনার আয়োজন করে তা দোষের কিছুই নয়।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে গত শুক্রবার রাতে খুনের মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী পৌর মেয়র আবু তাহেরের বড় ছেলে এইচ এম বিপ্লবের বিয়ে সম্পন্ন হয়। গণমাধ্যমে ফলাও করে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকা প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। টনক নড়ে চট্রগ্রাম বিভাগীয় কারা-প্রশাসনেরও। এ বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে লক্ষ্মীপুর জেল-সুপারের বিরুদ্ধে। তিনি বিপ্লবের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কারাগারের ভেতরে বিয়ে আয়োজনে সহায়তা করেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজ এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলবেন বলে জানিয়ে ছিলেন।

‘কারাগারের আলোচিত বিপ্লবের বিয়ে জেল কোড মেনে হয়েছে কিনা’ এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্র বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে লক্ষ্মীপুরের ডিসিকে ফোন করেছিলাম। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, সেখানে যা হয়েছে তা সম্পূর্ন জেল কোড মেনেই হয়েছে।’

‘কারাগারে গায়ে হলুদের আয়োজন ছিল এছাড়া অভিযোগ উঠেছে কনে বিয়ের পর কারাগারে প্রবেশ করেছেন, এটা জেল কোডের মধ্যে পড়ে কি না’ এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, ‘কারাগারে কয়েদিরা যদি এই বিয়ে উপলক্ষে গায়ে হলুদ বা একটু-আধটু গান-বাজনার আয়োজন করে তা দোষের কিছুই নয়।’ কনের কারাগারে প্রবেশের বিষয়ে প্রশ্নের কোন জবাব দেননি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

গত শুক্রবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে খুনের মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী এইচ এম বিপ্লবের বিয়ে সম্পন্ন হয়। কনে পৌরসভার লামচরী গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের মেয়ে সানজিদা খায়ের। কারারুদ্ধ বিপ্লবের সঙ্গে কনের ফোনে বিয়ে হয় বলে দাবি করেছে কারা-কর্র্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন। জেল গেটে বিয়ের কাবিনে স্বাক্ষর করেছে বিপ্লব।

শনিবার গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ঢাকার প্রশাসন ও কারা-কর্তৃপক্ষের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়। ক্ষোভের সৃষ্টি হয় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েও।
চট্রগ্রামের ডিআইজ প্রিজন অশিত কুমুর পাল শনিবার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। পত্রিকায় দেখেছি। লক্ষ্মীপুরের জেল সুপারের কাছে ঘটনার সঠিক তথ্য চাওয়া হয়েছে। তার কাছ থেকে জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী নুরুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর লাশ কয়েক টুকরা করে মেঘনা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় আদালত তাহেরপুত্র বিপ্লবকে ফাঁসির দন্ড দেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই সাজা মওকুফের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন বিপ্লব। ২০১১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান মৃত্যুদন্ড মাফ করে দেন। পরের বছর রাষ্ট্রপতি আরও দুটি হত্যা মামলায় (মহসিন ও কামাল হত্যা) বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেন।

এর আগে ২০০৯ সালে স্কুলছাত্র জাহিদ হত্যা মামলা ও এতিমখানায় অগ্নিসংযোগের মামলা থেকে বিপ্লকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে মামলা দুটি প্রত্যাহার করা হয়।

 

 

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ