তীব্র সমালোচনার মুখে সরকারের সম্প্রচার নীতিমালা

Gov.2বিশেষ প্রতিনিধি, এবিসিনিউজবিডি,

ঢাকা : তীব্র সমালোচনা মুখে পড়েছে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সরকারের সম্প্রচার নীতিমালা। দেশের গণমাধ্যম কর্মীরা এই নীতিমালার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রনের লক্ষে এই নীতিমালা অনুমোদন করেছে। এতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হবে। অপরদিকে নীতিমালার খসড়া তৈরীর লক্ষে গঠিত কমিটির প্রস্তাব ও নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কমিটির সদস্য দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল।

গতকাল (সোমবার) মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪’র খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।

অনুমোদিত এই নীতিমালায় ‘জনস্বার্থ বিঘিœত হতে পারে এমন কোনো বিদ্রোহ, নৈরাজ্য বা হিংসাত্মক ঘটনা প্রচার করা যাবে না’ এমন বিধান রাখা হয়েছে। বিধান করা হয়েছে সংবাদ ও টক শোসহ সরাসরি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের প্রচারনার ক্ষেত্রেও। এতে বলা হয়েছে, সংবাদ বা আলোচনামূলক অনুষ্ঠানে টক শো’তে অসত্য তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। একই সঙ্গে টক শো’তে উভয় পক্ষকে সমান সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অনুমোদিত এই সম্প্রচার নীতিমালায় সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ ও আদর্শ সমান্নত রাখার কথা বলা হলেও মূলত এই নীতিমালা তৈরী করা হয়েছে গণমাধ্যমকে সম্পূর্নরুপে নিয়ন্ত্রনের উদ্দ্যেশ্যে। গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনরা এমন মন্তব্য করেছেন। তাঁরা এই নীতিমালার তীব্র সমালোচনা করেছেন। বিক্ষুব্দ গণমাধ্যম কর্মীরা এই নীতিমালার প্রতিবাদে আজ (মঙ্গলবার) রাজপথে নেমে এসেছে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্যাহ এবিনিউজবিডিকে বলেন, গণমাধ্যম কখনো কোন নিয়ন্ত্রন মানে না। গণমাধ্যম স্বাধীন। সত্য প্রকাশে অঙ্গীকারাবদ্ধ। গণমাধ্যমকে অতিতেও অনেক সরকার নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করেছে। সফল হয়নি। এ ক্ষেত্রে কেউ সফল হওয়ার কথা না। বর্তমান সরকারও সফল হবে না। নতুন এই নীতিমালা করে সরকার গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার চেষ্ট করছেন। গণমাধ্যমই এর যথার্থ জবাব দেবে।

খসড়া সম্প্রচার নীতিমালা তৈরী করতে গঠিত কমিটির অন্যতম সদস্য দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত এই সম্প্রচার নীতিমালায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হবে। তিনি গুরুতর অভিযোগ তোলেন নীতিমালার খসড়া তৈরীর লক্ষে গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে। মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, গণমাধ্যম বান্ধব নয়, খসড়ার এমন কয়েকটি অধ্যায়ের বিষয়ে সদস্য হিসেবে তিনি কিছু সংশোধনের প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। এগুলো সংশোধনের কথাও ছিল। কিন্তু সংশোধন না করে, অনেক সদস্যকে না জানিয়ে খসড়া মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, কমিটির অনেক সদস্যই এখনও জানেন না পূর্নাঙ্গ খসড়ায় কি আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, গণমাধ্যমের জন্য স্বাধীন কমিশন প্রয়োজন। কিন্তু সরকার এই স্বাধীন কমিশন গঠনের আগেই নীতিমালার নামে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছে। সংবাদ, অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক সমাবেশ সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে নীতিমালায় বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিপন্থি। এমন অপচেষ্টা বন্ধে গণমাধ্যমকেই রুখে দাড়াতে হবে।

 

 

 

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ