বিপ্লবকে কুমিল্লা কারাগারে বাড়তি সুবিধা না দেওয়ার নির্দেশ
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা : লক্ষ্মীপুরের ভয়ংকর সন্ত্রাসী একাধিক খুনের মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি পৌর মেয়র আবু তাহের পুত্র বিপ্লবকে কুমিল্লা কারাগারে বাড়তি কোন সুবিধা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার দুপুরে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা চট্রগ্রাম ডিআইজি প্রিজনের (উপ মহা-পরিদর্শক) কাছে পাঠানো হয়েছে। এর একদিন আগে মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর কারাগার থেকে বিপ্লবকে কুমিল্লা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এই কারাগারের দশ সেলে রাখা হয়েছে তাকে। গত শুক্রবার কারাগারে থেকেই ঘটা করে বিয়ে করেন তিনি। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কারাগারে কনের সঙ্গে বিপ্লবকে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয় বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, একাধিক খুনের মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি লক্ষ্মীপুরের সন্ত্রাসী এ এইচ এম বিপ্লবকে কুমিল্লা কারাগারে বাড়তি কোন সুবিধা না দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চট্রগ্রাম ডিআইজি প্রিজন আসীম কান্তি পালের কাছে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, কয়েদি বিপ্লবের ঘটা করে কারাগারে বিয়ে করা নিয়ে গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। আর এর চার দিনের মাথায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মঙ্গলবার গভীর রাতে বিপ্লবকে লক্ষ্মীপুর কারাগার থেকে কুমিল্লা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। কুমিল্লা কারাগারের জেলার নাজিশ আহমেদ এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, তাহের পুত্র বিপ্লবকে সাধারণ কয়েদীদের মত কুমিল্লা কারাগারের দশ সেলে রাখা হয়েছে। কারাবিধি’র বাইরে এখানে তাকে বাড়তি কোন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি। লক্ষ্মীপুর কারাগারের জেলার মো. জয়নাল আবেদিন এবিসিনিউজবিডিকে বলেন, ‘মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিপ্লবকে লক্ষ্মীপুর কারাগার থেকে রাতে পুলিশি পাহারায় কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়। কুমিল্লা কারাগারে পাঠানোর আগে এখানে (লক্ষ্মীপুর কারাগারে) বিপ্লবের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করেন।’ গত শুক্রবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর কারাগারে থেকেই বিপ্লব বিয়ে করেন জেলার পৌরসভার লামচরী গ্রামের প্রয়াত আবুল খায়েরের মেয়ে সানজিদা খায়েরকে। তার আগে কারাগারে গায়েহলুদ ও বিয়ের পর ওই রাতে বর-কনের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয় বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রশ্নবিদ্ধ হয় কারাপ্রশাসন। তোলপাড় শুরু হয় প্রশাসনে। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিপ্লবকে কুমিল্লা কারাগারে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরো জানায়, আগামী ১১ আগস্ট এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চট্রগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষের উপ মহা-পরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) অসীম কান্তি পালের লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগার পরিদর্শনে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে লক্ষ্মীপুরে খুন-সন্ত্রাসের কারণে দেশব্যাপী আলোচিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা আবু তাহের ও তার ছেলে বিপ্লব। পৃথক তিনটি খুনের মামলায় বিপ্লব সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তাকে বহুল আলোচিত নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড এবং মহসিন ও ফিরোজ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা দেন আদালত। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিপ্লব পলাতক ছিলেন। তিনি ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে আত্মসমর্পণ করেন। ওই বছরই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বিএনপির নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় বিপ্লবের মৃত্যুদন্ড মাফ করে দেন। পরের বছর রাষ্ট্রপতি আরও দুটি হত্যা মামলায় (মহসিন ও কামাল হত্যা) বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেন। বিপ্লব এখন এই সাজা ভোগ করছেন। কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বিপ্লবকে আরও সাড়ে চার বছর কারাগারে সাজা ভোগ করতে হবে।