ছাত্রলীগ নেতা তপুর নির্দেশে এসপি ফজলুল করিমকে হত্যা

aspসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর পরিকল্পনা ও নির্দেশেই অবসরপ্রাপ্ত সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল করিমকে হত্যা করা হয়েছিল। গত বছরের ২৯ আগস্ট সকালে রামপুরা ওয়াপদা রোডে নিজ বাসায়ই খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিম। এর আগের দিন তার নিজ বাসায় বসেই কিলারদের নিয়ে খুনের চুড়ান্ত পরিকল্পনা করেন ছাত্রলীগ নেতা তপু।
এরপর কিলার গ্রুপের হাতে ৩টি অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়। সেই অস্ত্র দিয়ে পরের দিন পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিমকে হত্যা করে আবার তপুর কাছে অস্ত্র জমা দেয় কিলার গ্রুপ। তপুর মাদকব্যবসায় বাধা দেওয়া, বড় একটি মাদকের চালান ধরিয়ে দেয়া এবং নিজের ক্যাডার রাসেলকে থাপ্পড় মারার জের ধরেই ফজলুল করিমকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয় তপু। পুলিশি তদন্ত ও কিলার গ্রুপের সদস্য ওয়াসিম রতনের জবানবন্দি থেকে বেরিয়ে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্ত সূত্রে এসব বিষয় জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ৮ জনের একটি কিলার গ্রুপ পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিম হত্যা মিশনে অংশ নেয়। এর মধ্যে রাজিব, রাসেল এবং হাবেল নামে ৩ সন্ত্রাসী ৩টি অস্ত্র নিয়ে ফজলুল করিমের বাসায় প্রবেশ করে। ৩ জনের হাতে ছিল ৩টি অস্ত্র। এর মধ্যে রাজিব পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিমকে গুলি করে হত্যা করে। রাসেল ও হাবেল রামপুরার ওয়াপদা রোডে নিজ বাড়িতে ফজলুল করিমের স্ত্রী ও গৃহকর্মী আজাদকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। আর বাসার সামনে পাহারায় ছিল ওয়াসিম রতনসহ অন্য সন্ত্রাসীরা। টেলিফোনে পুরো হত্যা মিশন পরিচালনা করেন তপু। মিশন শেষ হওয়ার পর কিলাররা তপুর সঙ্গে দেখা করেন এবং ৩টি অস্ত্র জমা দেন তার কাছে। তখন তপু তাদের কিছুদিনের জন্য গা-ঢাকা দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিলার গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে রাজিব গত ৭ আগস্ট হাতিরঝিলে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হয়। অন্যরা এখনও পলাতক রয়েছে।
সূত্র জানায়, হত্যার পর-পরই রামপুরা থানার এসআই ওয়াহিদ জানতে পারেন কারা কীভাবে পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিমকে হত্যা করেছে। কিন্তু তপুর সঙ্গে অবৈধ লেনদেনের সম্পর্ক থাকায় তিনি পুরো বিষয়টি চেপে যান। এমনকী গোয়েন্দা পুলিশ কিলার গ্রুপের সদস্যদের খোঁজে রামপুরা ওয়াপদা রোড এলাকায় অভিযানে আসলেই ডিবি পুলিশের উপস্থিতির খবর তিনি টেলিফোনে তপুকে জানিয়ে দিতেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে তাকে রামপুরা থানা থেকে বদলি করে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, রামপুরার ওয়াপদা রোড ও আশপাশ এলাকায় তপু ফেনসিডিল ও ইয়াবাসহ নারী ব্যবসা করত। আর তপুর পক্ষে এ ব্যবসা দেখভাল করত রাসেল। এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একদিন রাসেলকে ফজলুল করিম থাপ্পড় মারেন। বিষয়টি তপুর জানার পরই ক্ষুব্ধ হন এবং ফজলুল করিমকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তকালে এ হত্যাকান্ডে জড়িত অভিযোগে প্রথম গ্রেপ্তার হয় ওয়াসিম রতন। সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকান্ডের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে। জবানবন্দিতে জানায়, ছাত্রলীগনেতা তপুর পরিকল্পনা ও নির্দেশেই এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর গতকাল বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিম হত্যাকান্ডের জোর তদন্ত চলছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান।
(মেহদী/ ১৩ আগষ্ট ২০১৪)

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ