এসপি ফজলুল করিম হত্যার ১ বছরেও তদন্তে অগ্রগতি হয়নি
মনির হোসেন মিন্টু, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : রাজধানীর রামপুরায় সিআইডির অবসারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল করিম হত্যার এক বছরেও এই মামলার তদন্ত কার্যক্রমে কোন অগ্রগতি হয়নি। ধরা পড়েনি অভিযুক্ত আসামিরাও। আর এ কারনে নিহতের পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
গত বছরের ২৯ আগস্ট সকালে রামপুরা ওয়াপদা রোডে নিজ বাসায়ই খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিম। তিনি সর্ব শেষ সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকা অবস্থায় অবসর গ্রহন করেন।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি থানা পুলিশের হাত ঘুরে মহনগর গোয়েন্দা পুলিশকে দেওয়া হলেও এর তদন্ত কার্যক্রমে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। অভিযোগ উত্থাপিত হওয়া চিহ্নিত একজন আসামিও গ্রেফতার হয়নি।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, নিহত পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিমের হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত ছাত্রলীগ থেকে অব্যহতি দেওয়া রামপুরা থানার সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তপুকে গত এক বছরেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে নিহতের পরিবার দাবি করেছে, তপু সরকারী দলের ছাত্র সংগঠনের ক্ষমতাধর হওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি।
নিহতের স্ত্রী স্বপ্না করিম এই প্রতিবেদককে বলেন, যিনি নিহত হয়েছেন, তিনি এক সময়ের একজন চৌকষ পুলিশ কর্মকর্তা। আর তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তরা। এর পরও একটি বছর পেরিয়ে গেল, আমার স্বামী (ফজলুল করিম) হত্যার তদন্তে কোন অগ্রগতি নেই। এটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের।
স্বপ্না করিম বলেন, ‘স্থানীয় সবাই বলেছে, এই নৃশংস হত্যার সঙ্গে মোয়াজ্জেম হোসেন তপুসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী জড়িত। প্রকাশ্যেও অনেকে বলেছে, এখানকার আওয়ামী লীগের নেতারাও বলেছেন, তারপরও তপুসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করা হয় না।’ নিহতে স্ত্রী আরো বলেন, ‘আমারাও ফজলুল করিমের পরিবারের পক্ষ থেকে বহুবার গোয়েন্দা পুলিশকে তপুর জড়িত থাকার বিষয় অবহিত করেছি, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। গ্রেফতারতো দুরের কথা, জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও তপুকে আটক করা হয়নি।’
রামপুরা থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিম হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগেই মোয়াজ্জেম হোসেন তপুকে রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর পরও তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা কেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছে না, তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে সূত্রটি।
থানা পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, রামপুরার ক্ষমতাধর তপুর নির্দেশেই অবসরপ্রাপ্ত সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল করিমকে হত্যা করা হয়েছে। গত বছরের ২৯ আগস্ট ফজলুল করিমকে হত্যার আগের রাতে নিজ বাসাতেই কিলারদের নিয়ে চূড়ান্ত মিটিং করেন তপু। কিলার গ্রুপের হাতে ৩টি অস্ত্রও তুলে দেওয়া হয়। সেই অস্ত্র দিয়ে পরের দিন সকালে পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিমকে হত্যা করে আবার তপুর অস্ত্র ফেরৎও দেওয়া হয়। মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়া এবং তপুর ডান হাত হিসেবে পরিচিত ক্যাডার রাসেলকে থাপ্পড় মারার জের ধরেই এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। যা পুলিশের হাতে আটক হওয়া কিলার গ্রুপের সদস্য ওয়াসিম রতনের জবানবন্দি থেকেও বেরিয়ে এসেছে।
তদন্তের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর এ বিষয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিম হত্যাকান্ডের তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে কোন প্রকার অবহেলা করা হয়নি। অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এই মামলাটিকে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান। কেউই রেহাই পাবে না।’