ছেলেকে কোথায় পুঁতে রেখেছেন চিনিয়ে দেন
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ‘ছেলেকে যদি না দেন, কোথায় পুঁতে রেখেছেন চিনিয়ে দেন। তাহলে কবর হিসেবে সেখানেই জিয়ারত করব।’
নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা নিজামউদ্দিন মুন্নার হদিস জানতে তাঁর বাবা শামসুদ্দিন এভাবেই আকুতি জানান।
আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ২০-দলীয় জোটের আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে শামসুদ্দিন এ কথা বলেন। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে এসেছিল বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলে অর্ণব। অর্ণব বলে, ‘২৮ মাস হলেও বাবার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না আমরা। গুম করে রাজনীতি করা একটি স্বাধীন দেশে চলে না। আমরা বাবাকে ফিরে পেতে চাই।’
মানববন্ধনে আরও এসেছিলেন নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম, ছাত্রদলের নেতা জহিরুল ইসলামের মা হোসনে আরা বেগম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আদনানের বোন ফারহানা সুলতানা প্রমুখ। প্রত্যেকেই নিজেদের কষ্টের কথা জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুম-খুনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নীরবে গুম-খুন দেখার আর সময় নেই। এই অত্যাচার, অন্যায়, অপহরণ ও গুম-খুনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
গুম-খুনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানের পাশাপাশি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ফখরুল। তিনি বলেন, অবৈধ ও অনৈতিক সরকারকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে।
ফখরুলের ভাষ্য, কেবলমাত্র ঢাকায় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ২৪ জন গুম-খুন হয়েছেন। এ ছাড়া জামায়াত-শিবিরসহ অন্যান্য দলের অনেকে গুম হয়েছেন। সারা বাংলাদেশ এখন এক ভীতি, সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। বিরোধী দল ও মতকে স্তব্ধ করার জন্য সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে দিয়ে অত্যাচার-নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। মানুষ যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।
বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, অবিলম্বে গুম-খুন বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস করা হয়েছিল একটা সময়কে সামনে রেখে। কিন্তু এখন দেশে এই পরিস্থিতি বিরাজমান।
মির্জা আব্বাস দাবি করেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি আরও নাকি তালিকা হচ্ছে। আরও হত্যা, গুম, খুন হবে। এ জন্য তিনি নেতা-কর্মীদের সাবধানতার পাশাপাশি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বিজয়নগরের নাইটিংগেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, মাহবুবুর রহমান, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য তাসনীম আলম, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।