সংসদে জাপার তিন নেতার ঝগড়া

Parlament সংসদসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে বাদ পড়া দুই নেতা মসিউর রহমান (রাঙ্গা) ও তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদের তীব্র বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষ উচ্চস্বরে ধমকাধমকিও করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর বিরোধীদলীয় সদস্যদের লবিতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংসদ লবিতে বসা জিয়াউদ্দিনকে উদ্দেশ করে মসিউর রহমান জাপার রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়া এবং তাঁকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে অব্যাহতির বিষয়ে উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন। মসিউর ও জিয়াউদ্দিন কাছাকাছি আলাদা সোফায় বসা ছিলেন।

জিয়াউদ্দিনকে উদ্দেশ করে মসিউর রহমান বলেন, ‘এত বছর ধরে রাজনীতি করছি, হুট করে দল থেকে বের করে দেওয়া কি সঠিক হয়েছে? মানুষের কাছে এভাবে ছোট করা কি ঠিক হলো?’ এ পর্যায়ে জিয়াউদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এ সময় মসিউর উচ্চকণ্ঠে জিয়াউদ্দিনকে চুপ করতে বলেন এবং এ জন্য তাঁকে দায়ী করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় পাশে থাকা তাজুল ইসলামও মসিউরের সমর্থনে কথা বলা শুরু করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বিষয়ে জিয়াউদ্দিনের দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তাজুল বলেন, ‘এত দিন আমাকে নিয়ে কেউ কথা বলতে পারেনি। এখন আমার বিরুদ্ধে দুর্নাম করা হচ্ছে। উপনেতা হতে না পেরে এসব আজেবাজে কথা বলছেন।’ এ সময় বিরোধীদলীয় লবির ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ পর্যায়ে তাজুলকে উদ্দেশ করে জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘আপনি বড় নেতা হলেন কবে। এক-এগারোর সময় অন্য দলে গিয়েছিলেন। বিএনপি থেকে এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে নির্বাচনও করেছেন।’ এ পর্যায়ে মসিউর হাত উঁচিয়ে জিয়াউদ্দিনের দিকে তেড়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তবে অন্যদের হস্তক্ষেপে ঘটনা আর বাড়েনি।
জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম কথা-কাটাকাটি হয়েছে বলে স্বীকার করেন। তবে জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ কথা-কাটাকাটির কথা অস্বীকার করেছেন। আজ রাতে তিনি বলেন, ‘রংপুরে কারা নাকি রাঙ্গার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। সে জন্য সে কিছুক্ষণ চিল্লাচিল্লি করেছে। এ সময় আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ আরও অনেকে ছিলেন। আমরা চুপচাপ ছিলাম।’
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তখন সংসদে উপস্থিত থাকলেও লবিতে ছিলেন না।
জিয়াউদ্দিনের সংবাদ সম্মেলন

দুপুরে জাপার বনানীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ হলে চেয়ারম্যান তা বরদাশত করবেন না। মসিউর রহমান ও তাজুল ইসলামের কিছু বক্তব্য চেয়ারম্যানের গোচরে এসেছে। তা দেখে তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন।
এতে দলে ভাঙন বা বিভক্তি দেখা দেবে কি না, এ প্রসঙ্গে জিয়াউদ্দিন বলেন, প্রেসিডিয়ামের পদ থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, দল থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় জাপাকে উত্তাল নদীর সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘যে নদীর গর্জন বেশি, সে নদীর কূলও ভাঙে, ঢেউ তো উপচে পড়বেই। জাতীয় পার্টি একটি ভাইব্রেন্ট দল।’
তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, এরশাদ বিরোধী দলের নেতা এবং আপনি (জিয়াউদ্দিন) উপনেতা হতে চেয়েছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব বলেন, ‘এরশাদ দলের চেয়ারম্যান। তাঁর অধীনেই সংসদীয় দল। আমি দলের মহাসচিব। এ পদ অনেক বড়। তাই অন্য কিছু হওয়ার দরকার নেই।’
তাজুল ইসলাম সম্পর্কে জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘তিনি একজন বিতর্কিত লোক, এটা সবাই জানেন। তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের কথাও আমরা শুনেছি। তিনি জাতীয় পার্টি থেকে গিয়ে পিডিপি করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এরশাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে হারেন। এর পরও এরশাদ তাঁকে মাফ করে দিয়ে দলে নিয়েছেন।’
জাতীয় পার্টির ক্ষমতার উৎসকেন্দ্র কি প্রধানমন্ত্রী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জাপার মহাসচিব বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল হচ্ছে শ্যাডো গভর্নমেন্ট (ছায়া সরকার)। আর প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সংসদ নেতা। সে অর্থে তিনি বিরোধী দলেরও নেতা। সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা তো বলতেই হবে। কিন্তু কেউ নালিশ করতে যাননি।
মন্ত্রিসভা থেকে জাপার তিন সদস্যের পদত্যাগ ও সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা নির্বাচন নিয়ে যে সংকট চলছে, এ বিষয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরতেই গতকাল সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ