নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নিউইয়র্কে আশরাফুল

Mohammod Ashraful মোহাম্মদ আশরাফুলস্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করেছেন গত ১৫ মাস। বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ স্বীকার, এ নিয়ে পুরো ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড়, নিষেধাজ্ঞা, আপিল—সব মিলিয়ে দুঃসময়ের সত্যিকারের চেহারাটা দেখা হয়ে গেছে মোহাম্মদ আশরাফুলের। সুসময় না এলেও নিউইয়র্কে গত একটা মাস মানসিকভাবে অনেকটাই নির্ভার আছেন তিনি। এখানে উইকএন্ড ক্রিকেট লিগে খেলছেন। ঘাম ঝরাচ্ছেন জিমে। সেখানে দীর্ঘসময় কাটাচ্ছেন বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফিটনেস ফিরে পাওয়র জন্য। শরীরের মেদ খুব সহজে ঝরানো যায়, কিন্তু দুঃসময়ের মেদ?
আশরাফুল আপাতত এই সাময়িক প্রবাসজীবনে খুশি বলেই বললেন, ‘দেশে ওই সময়টা মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত ছিলাম। চারদিকে প্রচণ্ড সমালোচনা, চাপ, নানা ধরনের আলোচনা। ঘর থেকেই বের হতে ইচ্ছে করত না। কারণ ওখানে তো সবাই আমাকে চেনে। এখানে সে সমস্যা নেই। যেখানে খুশি সেখানে চলে যাই। ইচ্ছেমতো ঘুরি-ফিরি। আব্বা-আম্মাও খুব খুশি আমার জীবনযাপনের এই পরিবর্তনে।’
গত ৭ আগস্ট নিউইয়র্কে পা রাখেন আশরাফুল। ক্রিকেটার বন্ধু আতিয়ার রহমানের লংআইল্যান্ডের বাসায় উঠেছেন। সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে আছেন আরেক ক্রিকেটার বন্ধু সাজিদ হাসান। নিউইয়র্কে প্রতি শনিবার বাংলা লিগের ম্যাচ হয় কুইন্সের ফ্ল্যাশিং মিডোজ মাঠে। আশরাফুল সেখানে খেলছেন বেঙ্গল টিমের হয়ে। নিয়মিত রান পাচ্ছেন। বললেন, ‘শনিবার বেঙ্গল টিমের হয়ে ৮৮ রান করেছি। ওই দিন বিকালেই এক ফ্লাইটে মিশিগানে গেলাম একটা প্রদর্শনী ম্যাচ খেলার জন্য। সেখানে নটআউট ছিলাম ৭৭ রানে। সব ম্যাচেই জয় পাচ্ছি। তবে জয়-পরাজয় আসল কথা না, অনেক দিন পরে খেলার মধ্যে ফিরলাম—সেটাই বড় কথা। একজন খেলোয়াড়কে কি খেলা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়? এ জন্যই ব্যাট হাতে ফিরতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।’

গত ১৫ মাসে আশরাফুলের শরীরে যোগ হয়েছে বাড়তি ১১ কেজি ওজন। তাই নিউইয়র্কে পা রেখেই ভর্তি হয়েছেন লংআইল্যান্ডের এক জিমনেশিয়ামে। সেখানে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই-তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় করছেন। ট্রেডমিল, সাইক্লিং, ওয়েট ট্রেনিং নিয়মিত করছেন বলে জানালেন, ‘উইকএন্ডে খেলা ছাড়া তেমন কোনো কাজ নেই, তাই জিমনেশিয়ামে লম্বা সময় কাটাই। সাইকেল চালিয়ে যাই। চারদিকে মনোরম প্রকৃতি। খুব ভালো লাগে।’
অ্যাশ এরপর যুক্ত করেন, ‘খালিদ, শামসু আর তামিম নামে আমার নিউইয়র্কের তিন বন্ধু বেঙ্গল টিমের মালিক। ওরা আমার থাকা-খাওয়ার সব খরচ জোগাচ্ছে। কোথাও খেলতে গেলে আয়োজকদের খরচে যাই। সব মিলে এখানে বেশ আরামেই আছি।’ আগামী ২ নভেম্বর নিউইয়র্ক থেকে ইংল্যান্ডের উদ্দেশে উড়াল দেবেন আশরাফুল। ওখানে এক মাস কাটিয়ে ঢাকায় ফিরবেন।
ঢাকায় এদিকে ৮ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে আশরাফুলের দ্বিতীয় দফা শুনানি শুরু হয়েছে। নিউইয়র্ক থেকে ফোনে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করছেন তিনি। বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ স্বীকার করার জন্য আট বছর সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আশরাফুলকে। শাস্তির এক বছর ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আশরাফুল চান শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে আবার মাঠে ফেরার জন্য, ‘আমি যখন ম্যাচ ফিক্সিংয়ে যুক্ত থাকার অভিযোগ স্বীকার করলাম, তখন থেকেই জানি আমাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। তাই ভাগ্যকে আমি মেনে নিয়েছি। এখন একটাই চাওয়া—শাস্তির মেয়াদ যাতে আট বছর থেকে কমিয়ে তিন বছরে আনা হয়। আর সেটা হলে আমার পক্ষে সম্ভব হবে আবার বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার। সেই সুযোগের আশায় আছি।’
সেই আশা কি মিটবে আশরাফুলের? উত্তরটা যে সময়ের মুঠোয় বন্দী !

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ