খালেদা জিয়ার দুটি আপিল খারিজ
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রিট খারিজের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন খারিজ করেছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আজ রোববার সকালে এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনে শুনানি শেষে আজ আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ।
আজ সকাল নয়টা ৫০ মিনিটের দিকে আদালত বলেন, ‘ডিসমিসড।’
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, দুটি লিভ টু আপিল খারিজ হয়েছে। তাই মামলা দুটির কার্যক্রম চলতে বাধা নেই। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আরও দুটি আবেদনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো স্থগিতাদেশ দেননি সুপ্রিম কোর্ট।
আদালত থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে দুটি রিভিশন আবেদন করা হয়েছিল। হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেন। এর বিরুদ্ধে করা দুটি লিভ টু আপিল এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আপিল বিভাগে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলা দুটির কার্যক্রম চলতে পারে না বলে ধার্য তারিখে নিম্ন আদালতে বলা হবে।
খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘খারিজ হওয়া লিভ টু আপিল দুটির আইনগত দিক রয়েছে বলে মনে করি, যা নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। তাই মক্কেলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে হয়তো আমরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারি।’
দুটি মামলায় গত ১৯ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ অভিযোগ গঠন করেন। এ দুই মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে এবং বিচারক নিয়োগ-প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১২ মে দুটি রিট করেন খালেদা জিয়া। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৫ মে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিভক্ত আদেশ দেন। পরে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চে পাঠানো হয়। ১৯ জুন ওই একক বেঞ্চ রিট দুটি খারিজ করেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন (সিএমপি) করেন খালেদা জিয়া। পরে লিভ টু আপিল করা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর লিভ টু আপিলের শুনানি শুরু হয়।
খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৩-এর অস্থায়ী এজলাসে এই দুটি মামলা সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। গত বুধবার খালেদা জিয়ার পক্ষে করা সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ধার্য করা হয়েছে।
মামলা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া, তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বোনের ছেলে মমিনুর রহমান।
মামলায় শুরু থেকে পলাতক আছেন কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। এ মামলার আসামি তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে আছেন। তাঁকে এ মামলায় পলাতক দেখানো হয়েছে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে জমি কেনা নিয়ে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তাঁর একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। মামলায় হারিছ চৌধুরী শুরু থেকেই পলাতক। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
এ দুটিসহ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৭টি ও ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানও স্বামীর সঙ্গে দুদকের একটি মামলার আসামি।