যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ যৌন হয়রানির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এক জরুরি সিন্ডিকেট বৈঠক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘নৈতিক স্খলনের অভিযোগে তাঁকে (সাইফুল ইসলাম) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তদন্ত কমিটি করা হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে আজ দিনভর অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজের শিক্ষার্থীরা। অবরোধকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার খাতায় নম্বর-সংক্রান্ত ঝামেলার কথা বলে গত শনিবার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম এক ছাত্রীকে নিজ বাসায় ডেকে যৌন হয়রানি করেছেন। গতকাল রোববার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হলেও ২৪ ঘণ্টায় কোনো সমাধান না পেয়ে তাঁরা সাইফুলকে অবরুদ্ধ করেন।
উপাচার্য বরাবর লেখা একটি আবেদনপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করেন, ৮ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কার্যালয় থেকে ফোন করে তাঁকে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়। তিনি চেয়ারম্যানকে ফোন করলে পরে কথা বলবেন বলে জানান। দুদিন পর চেয়ারম্যান তাঁকে ফোন করে গত ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষায় নম্বরসংক্রান্ত জটিলতার কথা বলে নিজের বাসায় ডাকেন।
চিঠিতে ওই ছাত্রী আরও জানান, পুরো বিষয়টি তিনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওয়াহীদা মল্লিককে জানান। শনিবার বিকেলে চেয়ারম্যানের বাসায় যাওয়ার কথাও আগেই ওয়াহীদাকে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়ে জানিয়ে রাখেন বলেও জানান তিনি।
বাসায় যাওয়ার পর ওই শিক্ষক তাঁকে ‘শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত’ করেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। বাসায় অবস্থানের কিছুটা সময় তাঁর মোবাইল ফোনের রেকর্ডার চালু ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। আবেদনপত্রের সঙ্গে মুঠোফোনে ধারণ করা এসব তথ্যপ্রমাণও জমা দেন তৃতীয় বর্ষ ষষ্ঠ সেমিস্টারের ওই ছাত্রী।
এ ব্যাপারে জানতে চেষ্টা করেও ওয়াহীদা মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
এদিকে ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আজ সাইফুল ইসলামকে দুই দফায় দিনভর তালাবদ্ধ করে রাখেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রথম দফায় ক্লাস নিতে গেলে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কলা ভবনের ৬০০৬ নম্বর শ্রেণিকক্ষে তাঁকে আটকে রাখা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এম আমজাদ আলী গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে চেয়ারম্যানের নিজের কক্ষে দিয়ে আসেন। পরে সেখানেও তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পর রাত সাড়ে আটটার দিকে আন্দোলনকারী একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একটু পরই ওই কক্ষের তালা খোলা হবে।
চেয়ারম্যানকে নিজ কক্ষে নেওয়ার পথে সাংবাদিকদের সামনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে অধ্যাপক সাইফুল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ কিন্তু কে, কী কারণে এমন ষড়যন্ত্র করছে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি আর কোনো কথা বলেননি। পরে বিকেলে ও সন্ধ্যায় সাইফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বেলা দেড়টার দিকে অবরুদ্ধ অবস্থায় অধ্যাপক সাইফুল শিক্ষা কার্যক্রমসহ সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করেন। অব্যাহতিপত্রে তিনি ঘটনার ‘সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে’ ছুটি চেয়েছেন।
বেলা দুইটার দিকে অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে ‘আজীবন বহিষ্কারের’ দাবিতে ক্যাম্পাসে বাম-সমর্থিত ছাত্রসংগঠনগুলো একত্রে বিক্ষোভ মিছিল করে।
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এম আমজাদ আলী বলেন, ‘অভিযোগকারী ছাত্রীর দেওয়া অডিও রেকর্ড শুনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করা হয়। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত শিক্ষক বিভাগের চেয়ারম্যান হওয়ায় বিষয়টি সিন্ডিকেটে উত্থাপনের জন্য বলা হয়েছে।’