জামায়াত কি রায়ে অখুশি, তারা ফাঁসি চেয়েছিল ?
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অপরাধের কারণে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা কারও কাঙ্ক্ষিত ছিল না। ফাঁসির রায় বহাল থাকলেই মানুষ বেশি খুশি হতো। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তাঁরা রায় দিয়েছেন। এ নিয়ে বলার কিছু নেই।’
আজ বৃহস্পতিবার দশম সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সংসদের অধিবেশন সমাপ্তির রাষ্ট্রপতির ঘোষণা পড়ে শোনান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাঈদী নিজেকে মানুষের সামনে ধর্মগুরু ও ধর্ম প্রচারক বলে উপস্থাপন করে আসছিলেন। এই রায়ে এটা প্রমাণ হয়েছে, সে লুটপাটকারী, ধর্ষণকারী, খুনি, সামাজিকভাবে অপরাধী একজন মানুষ। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, চলবে। এর মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে। রায়ের পর জামায়াতে ইসলামীর হরতাল দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘হরতাল কেন? কার জন্য? জামায়াত কি রায়ে অখুশি। তারা কি সাঈদীর ফাঁসি চেয়েছিল?’
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি বলেন, সংশোধনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সম্মান, পবিত্রতা আরও সুরক্ষিত করা হয়েছে। যাঁরা এর সমালোচনা করছেন, তাঁরা না বুঝেই করছেন, বাস্তব কথা কেউ চিন্তা করছেন না।
নারীকে অসম্মান করলে সংসদে নারীর সংখ্যা বাড়বে
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন ব্যারিস্টার, যে বাপের হোটেলে খেয়ে বড় হয়েছে, সে বলছে, দুই মহিলা রাজনীতির কী বুঝবে? অথচ নারীরা এখন অনেক কিছু করছে। এই ব্যারিস্টার বঙ্গবন্ধুর খুনি হুদাকে নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন, দল গঠন করেছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে সফল হতে পারেননি। তিনি আমার কাছে ধরনা দিয়েছিলেন উপদেষ্টা হওয়ার জন্য। এরা সুসময়ে সরব। আর দুঃসময়ে নীরব। এরা যত নারীকে অসম্মান করবে, সংসদে নারীদের সংখ্যাও বাড়বে।’
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যে শেখ হাসিনা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যনিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারে সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বিভিন্ন সমালোচনা ও দাবির বিষয়ে কথা বলেন তিনি। বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, পদ্মা সেতুর মূল কাজ ও নদী শাসনের কাছ শুরুর কথা উল্লেখ করেন।
ব্যাংক সেক্টরের অনিয়ম আ.লীগ সরকারই ধরেছে
শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংক সেক্টরে অনিয়মগুলোই নিয়মে পরিণত হয়েছিল। এগুলো তার সরকারই ধরেছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঢাকার যানজট নিরসন, জলাবদ্ধতা রোধ, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, সড়কের উন্নয়নের জন্য পদেক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি। খাদ্য বিষক্রিয়া রোধেও তার সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কোনো কিছু লুকিয়ে রাখছে না। সব অনিয়ম উন্মুক্ত করছে। ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি উন্নত মানের কারাগার নির্মাণের কাছ চলছে।
সংসদ নেতা বলেন, শত প্রতিকূলতার ভেতরও জানুয়ারির প্রথমেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার কাজ চলছে। ২০১৫ সালে প্রায় ৩২ কোটি, ৬৩ লাখ, ৪৭ হাজার ৯১৩টি বই লাগবে। এ জন্য এখন থেকেই ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। ব্যাপক কর্মসংস্থান হচ্ছে। পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। হজ ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ভালো করেছে। এটা সৌদি সরকারই বলেছে।
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ অধিবেশনে আসা ১৩টি সরকারি বিলের মধ্যে সংবিধান সংশোধনসহ মোট ৫টি বিল পাস হয়।
কার্যপ্রণালি বিধির ৭১ বিধিতে ৫৪৪টি নোটিশ পাওয়া যায়, যার মধ্যে ২৭টি গ্রহণ করে ১৪টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়। ৭১ (ক) বিধিতে দুই মিনিটের আলোচিত নোটিশের সংখ্যা ১৩৫টি।
প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য মোট ১৬৩টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, এর মধ্যে তিনি ৫২টির উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তর দেওয়ার মোট ২ হাজার ৫৭৯টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। যার মধ্যে মন্ত্রীরা উত্তর দিয়েছে ২ হাজার ৩৬০টি।
এ ছাড়া আজ জাতীয় পার্টির সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। এই সংসদে জাতীয় পার্টি থেকে একমাত্র তাঁকে কোনো কমিটির সভাপতি করা হলো।