বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে যাবে : খন্দকার মাহবুব
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন দাবি করেছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে দেওয়া হলে উচ্চ আদালতের বিচারকেরা রাজনৈতিক দাবার ঘুঁটিতে পরিণত হবেন। বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে সরকারের হাতে।
আজ শনিবার আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিদের এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি করেন খন্দকার মাহবুব। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।
মতবিনিময় সভায় খন্দকার মাহবুব বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা করার বিষয়ে আমরা বারবার দাবি করছি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা করা হচ্ছে না। ফলে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে ঢালাওভাবে অনেক ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনায় দক্ষতা-যোগ্যতা বিবেচনা না করে বিচারক নিয়োগ করেছে। যার ফলে আজ উচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি শুধু খর্ব হয়নি, বিচারপ্রার্থী জনগণের মধ্যেও আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান দাবি করেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান সংসদের বৈধতার প্রশ্ন যখন প্রশ্নবিদ্ধ, সে অবস্থায় আজ বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা যদি সংসদকে দেওয়া হয়, তাহলে উচ্চ আদালতের বিচারকগণ রাজনৈতিক দাবার ঘুঁটিতে পরিণত হবেন। সরকারের হাতে চলে যাবে বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ। বিচারকগণ দলীয় রাজনৈতিক চাপে থাকার কারণে স্বাধীনভাবে বিচারকার্যক্রম পরিচালনা করতে অনেক ক্ষেত্রে সক্ষম হবেন না।’
বিচার বিভাগের বর্তমান অবস্থাসহ তিনটি আলোচ্য বিষয় নিয়ে এই মতবিনিময় হচ্ছে।
১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল-২০১৪ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ৪০ বছর পর সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ন্যস্ত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করলে তা সংবিধানের অংশ হবে।
পাস হওয়া বিলে ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে দফা ২-এ বলা হয়েছে, প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠ সদস্যের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ করা যাবে।
৩ দফায় বলা হয়েছে, সাংসদদের প্রস্তাব-সম্পর্কিত এবং বিচারকের অসদাচরণ ও অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ৪ দফায় বলা হয়েছে, কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন।
এর আগে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত হয়েছিল। এরপর সামরিক ফরমানের দ্বারা পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়। প্রধান বিচারপতি ও অপর দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নিয়ে জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসংবলিত বিবৃতিতে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে। আইন অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো বিচারককে অপসারণ করা যাবে না। বিলটি আইনে পরিণত হলে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে।