জিইএফআই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা উন্নতমানের শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে ওবামার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়
মেহদী আজাদ মাসুম, এবিসিনিউজবিডি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নতমানের শিক্ষার জন্য সম্পদ প্রয়োজন। এই সম্পদের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব ও মতৈক্য গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। যুদ্ধাস্ত্র তৈরির বিপুল পরিমাণ অর্থ আমাদের সন্তানকে শিক্ষিত করার কাজে ব্যয় করতে হবে। তাহলেই কাঙ্ক্ষিত বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব। গতকাল বুধবার জাতিসংঘের সদরদপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘গ্লোবাল এডুকেশন ফার্স্ট ইনিশিয়েটিভ’ (জিইএফআই) শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি শান্তি ও অহিংস সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সবাইকে উন্নত শিক্ষার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করার আহবান জানান।
‘গ্লোবাল এডুকেশন ফার্স্ট ইনিশিয়েটিভ’ (জিইএফআই) শীর্ষক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) আমাদেরকে শিক্ষা অর্জন ও লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে সফল হতে সহায়তা করেছে। ২০১৫ সাল পরবর্তীতেও আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার হবে উন্নত শিক্ষা। বর্তমান সরকার চলতি অর্থ বছরের বাজেটের ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করেছে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ১২ কোটি তরুণও সক্রিয় কর্মী থাকবে। বর্তমান সরকার এসব তরুণের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে এবং তাদেরকে দক্ষ মানব মূলধনে পরিণত করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের ভিত রচিত হয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষা নীতি-২০১০ প্রণয়নের মধ্য দিয়ে।
শেখ হাসিনা তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, গুণগত শিক্ষার জন্য ভালো মানের শিক্ষক প্রয়োজন। গুণগত শিক্ষার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার প্রায় ১০ লাখ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। নারী শিক্ষাকে উত্সাহিত করতে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের শতকরা ৬০ ভাগ পদ যোগ্য নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা রয়েছে। একটি স্বল্প আয়ের দেশে গুণগত শিক্ষার জন্য বিনামূল্যে বই বিতরণ ও সমসাময়িক পাঠ্যক্রম জরুরি। ২০১৩ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩১ কোটি ৮০ লাখ বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। একটি নতুন জাতীয় পাঠ্যক্রম ও সৃজনশীল মূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিজ্ঞানের মূলধারা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) শিক্ষার মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
গুণগত শিক্ষার ক্ষেত্রে আইসিটি জ্ঞানকে সংযুক্ত করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশে আইসিটি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে যার লক্ষ্যই হলো একটি প্রযুক্তিজ্ঞান নির্ভর সমাজ গড়ে তোলা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনা খরচে প্রি-প্রাইমারি ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে। শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের দুপুরে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় ২০১৩ সালে সরকার প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংই ছিল মেয়ে শিক্ষার্থী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অন্যতম লক্ষ্য হলো দেশ-বিদেশের চাকরির বাজার ধরতে তরুণদের দক্ষ করে তোলা। একইসঙ্গে বঞ্চিতদের উন্নত শিক্ষা গ্রহণেরও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, মেয়ে ও নারীদের জন্য উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপু মনি, সংসদ সদস্য মেহজাবিন খালেদ ও রাজি মো. ফখরুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ওবামার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে ওবামার বক্তব্যের জন্য প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বিশ্বকে রক্ষায় প্রেসিডেন্ট ওবামার অঙ্গীকারের জন্যও তাকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ওয়াল্ড্রপ অ্যাসটোরিয়া হোটেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা আয়োজিত এক সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা বারাক ওবামার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী জানান। জাতিসংঘের ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকারী রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের সম্মানে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
ওবামার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বিনিময় বিষয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরো বলেন, প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন ২০১৪-এ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। ওবামা ছাড়াও শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মহেন্দ্র রাজাপাকসেসহ সংবর্ধনায় যোগদানকারী অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় তার সঙ্গে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা জয়কে দেখে মন্তব্য করেন যে ‘তোমাকে দেখতে সুন্দর লাগছে।’
বেলারুশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
গতকাল বুধবার বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিয়াসনিকোভিচের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় আধা ঘণ্টার এই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বি-পাক্ষিক ইস্যু নিয়ে দুই নেতা আলোচনা করেন। বৈঠককালে বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে দেড় কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রতি দেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান বেলারুশ নেতা। বৈঠককালে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য বেলারুশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এর আগে মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের উদ্যোগে আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। আগামীকাল যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আয়োজিত শান্তিরক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে তিনি যৌথ সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। একই দিনে তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৪০ বছর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দেবেন। নিউইয়র্কে অবস্থানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত, নেপাল, চিলি, কাতারসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পথে দুই দিন যুক্তরাজ্যে কাটিয়ে দুই অক্টোবর দেশে পৌঁছাবেন তিনি।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জিহাদুর রহমান জিহাদ একুশে সংবাদ: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী। ২২ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক অবস্থান করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত জলবায়ু সামিটে অংশ নেবেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতি, এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ, প্রযুক্তি ও সক্ষমতা তুলে ধরবেন। ২৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন সরকারের উদ্যোগে শীর্ষ পর্যায়ের শান্তিরক্ষা সামিটে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথ সভাপতিত্ব করবেন। ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিবের গ্লোবাল এডুকেশন ফার্স্ট ইনিসিয়েটিভ এর শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার ৪০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন ২৭ সেপ্টেম্বর। ঐদিন নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল-এ যোগ দেবেন তিনি। ভারত, নেপাল, চিলি, কাতার ও বেলারুশসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে অর্থমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, পরিবেশ ও বন মন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য, সচিব, বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি রয়েছেন। সরকারি প্রতিনিধি দলের সদস্য সংখ্যা ৫০।
এবিসি নিউজ ডটকম/আর/২৮-০৯-০১৪: