ত্যাগ ও আনন্দে ঈদ উদযাপন

Eid Mubarok ঈদ-জামাতসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আজ ১০ জিলহজ, সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ত্যাগের মহিমায় উত্সবমুখর পরিবেশে সারা দেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা।
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে দেশের মুসলিম সম্প্রদায় তাদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উত্সব ঈদুল আজহা উদ্যাপন করছে। ঘরে ঘরে ত্যাগের আনন্দে মহিমান্বিত হচ্ছে মন।
প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকেন। তবে ঈদের পর দুই দিন, অর্থাত্ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার ধর্মীয় বিধান রয়েছে।
আজ সকালে ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিরা স্থানীয় ঈদগাহ বা মসজিদে সমবেত হন। ধনী-গরিবের ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে নিজের পাপমোচন এবং পরিবার-পরিজন, দেশ ও মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া চেয়ে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন।
নামাজ শেষে অনেকেই যান কবরস্থানে স্বজনের কবর জিয়ারত করতে। অশ্রুসিক্ত হয়ে চিরকালের জন্য চলে যাওয়া স্বজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে করজোড়ে মোনাজাত করেন তাঁরা।

এরপর হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মহান আত্মত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের ভেতরের পশুত্বকে পরিহার ও আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করেন তাঁরা।

প্রতিবারের মতো এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। রাজধানী ঢাকায় হাইকোর্ট-সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকেরাসহ সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। জাতীয় ঈদগাহে নামাজ শেষে দেশের অব্যাহত শান্তি ও উন্নয়ন, জনগণের কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত হয়।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারা দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কালেমা ও ঈদ মোবারকখচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

আজ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র ও সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।

শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা নিয়ে ঈদুল ফিতরের দিন নির্ধারিত হয়। এ কারণে একেবারে রোজার শেষাবধি ঈদের দিনটি নিয়ে একরকমের অনিশ্চয়তা থাকে। তবে ঈদুল আজহা যেহেতু জিলহজ মাসের ১০ তারিখেই নির্ধারিত, তাই জিলহজের চাঁদ ওঠার পর হাতে বেশ খানিকটা সময় নিয়েই লোকে ঈদের প্রস্তুতি নিতে পারেন।

ঈদুল আজহায় পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি কেনাকাটা গৌণ। এই ঈদের প্রস্তুতির মধ্যে প্রধান বিষয় হলো পশু ক্রয়। অবশ্য যাঁরা ঈদের উত্সবে রাজধানী ঢাকা বা অন্য কোনো শহরের কর্মস্থল থেকে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে ফেরেন, তাঁদের প্রস্তুতি শুরু হয় যানবাহনের টিকিট সংগ্রহ করা থেকে বাক্স-পেটরা গোছানো দিয়ে। এরপর যাত্রা।

শুক্রবার থেকেই ঢাকা থেকে ঘরে ফেরার পালা শুরু হয়েছে। শনি ও রোববার শহরের সড়কগুলো ছিল প্রায় ফাঁকা। তবে ভিড় ছিল পশুর হাট, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে। ঈদের যাত্রায় ভোগান্তি কম নয়। এবারও তার কোনো হেরফের হয়নি। প্রিয়জনের সান্নিধ্য লাভের আনন্দ, আপন ঠিকানায় ফেরার অনুভূতির তুলনায় যাত্রার দুর্ভোগ মেনে নিয়েই সপরিবারে গ্রামে গেছেন অনেক মানুষ।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ