২৪ জুন আশরাফ-মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার আসামি আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আগামী ২৪ জুন আদেশ দেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ট্রাইবুনাল-২ এ রোববার বিদেশে অবস্থানরত এই দুই ব্যক্তির অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়।
শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও শাহীদুর রহমান। আসামি আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রের নিয়োগ আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান ও সালমা হাই টুনি।
শুনানিতে জেয়াদ আল মালুম বলেন, দুই আসামি একাত্তরে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, চিকিৎসক ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা ওই সময় স্বাধীনতাকামী মানুষদের আটক, নির্যাতন, হত্যা ও গণহত্যা চালিয়েছে।
প্রসিকিউটর শাহীদুর রহমান শুনানিতে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ, নির্যাতন ও পরবর্তীতে হত্যার ঘটনায় জড়িত আলবদর বাহিনীর সঙ্গে এই দুই ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাড়ি থকে একটি কাদামাখা মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রসিকিউটররা বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনাটিকেও গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করার আবেদন জানান ট্রাইব্যুনালে।
তবে শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেনকে অপহরণের সময় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদের সঙ্গে আশরাফুজ্জামান খানও ছিলেন উল্লেখ করায় প্রসিকিউটর শাহীদুর রহমানকে আরো পড়াশোনা করে আসার উপদেশ দেন বিচারকরা।
বিচারক শাহীনুর ইসলাম প্রসিকিউটর শাহীদুর রহমানকে প্রশ্ন করেন, “আপনি কি জানেন, একই অভিযোগে আলী আহসান মো. মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, অপহরণের সময় তার সঙ্গে সাত-আটজন মুখোশধারী ব্যক্তি উপস্থিত ছিলো?”
শাহীদুর রহমান ‘না’ সূচক উত্তর দিলে ট্রাইব্যুনাল বলে, “একই অভিযোগে আপনারা দুই ধরনের তথ্য দিচ্ছেন কেন? আশরাফুজ্জামান ওই ঘটনার সময় উপস্থিত থাকলে আগের অভিযোগেই তাদের নাম উল্লেখ করা হলো না কেন?”
আসামি আশরাফুজ্জামান খানের পক্ষে আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান বলেন, ১৯৭৩ সালের দালাল আইনে যে বিচার হয়েছিলো সেসময় আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিলো না। ১৯৯৭ সালের আগে তার বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যা বা অন্য কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি।
চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের পক্ষে সালমা হাই টুনি বলেন, ১৯৭১ সালে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িদদের সম্পর্কে বিভিন্ন বইয়ে যেসব তালিকা পাওয়া যায় সেগুলোতে চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের নাম পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ১৯৭১ সালে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের সংঘের নেতৃস্থানীয় পদে ছিলেন বা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ প্রসিকিউশন দিতে পারেনি।
এর আগে গত ৪ জুন এ বিদেশে অবস্থানরত এ দুই ব্যক্তির অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরু করার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
গত ২ মে আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলো ট্রাইব্যুনাল। সম্ভাব্য ঠিকানায় তাদের পাওয়া যায়নি বলে প্রসিকিউশন বিভাগ জানানোর পর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে দুটি জাতীয় দৈনিকে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১০ দিনের মধ্যে আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে তারা আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়।
আশরাফুজ্জামান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এবং চৌধুরী মাঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।এর আগে আবুল কালাম আযাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার হয় এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে।
গত ২৫ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর ২৮ এপ্রিল আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বলা হয়, আশরাফুজ্জামান খান ছিলেন ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ আলবদর বাহিনীর ‘চিফ এক্সিকিউটর’। আর চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ছিলেন তার ‘অপারেশন ইনচার্জ’।
তারা দুজনেই জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্য ছিলেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ‘সক্রিয় অবস্থান’ নেন।
পলাতক আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে ৫ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৬টি অভিযোগ রয়েছে।
আশরাফুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বেজড়া ভাটরা (চিলেরপাড়) গ্রামে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর।
আর চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বাড়ি ফেনীর দাগনভুঞার চানপুরে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করেন মো. আতাউর রহমান।