বাংলাদেশ-ভারত জেআরসি বৈঠক স্থগিত

TistaBirdgeরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আগামী ১৮ ও ১৯ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠেয় যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে।

ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রী হরিশ রাওয়াত এ বিষয়ে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের মুখপাত্র সুজিত ঘোষ।জেআরসির এবারের বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

এবিসি নিউজ বিডিকে তিনি বলেন, “অভ্যন্তরীণ জরুরি ব্যস্ততার কারণে পানিসম্পদ মন্ত্রীকে ঢাকা সফর বাতিল করতে হয়েছে।

চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, “পারস্পরিক আলোচনা করে জেআরসির বৈঠকের নতুন তারিখ ঠিক করা হবে।”

এবারের বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি ও টিপাইমুখ বাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।

এদিকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতিবাচক অবস্থানের যে কোনো পরিবর্তন হয়নি তার ইঙ্গিত আবারো পাওয়া গেল।

এর মধ্যে জেআরসি বেঠকে রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজিব বন্দোপাধ্যায়কে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা।

রাজিব বন্দোপাধ্যায় শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারকে আমি জানিয়েছি পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আমার পক্ষে জেআরসি বৈঠকে অংশ নেয়া সম্ভব নয়।”

তৃণমূলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা  এবিসি নিউজ বিডিকে  বলেন, “জেআরসি বৈঠকে সেচমন্ত্রীকে পাঠানোর অর্থ হবে তিস্তা ইস্যুতে তৃণমূলের যে অবস্থান রয়েছে সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতার ইঙ্গিত।”

আগামী জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে, যার পরিচালনার প্রধান দায়িত্বে রাজিবকে রাখতে চান তৃণমূল প্রধান মমতা।

তৃণমূলের ওই নেতা জানান, মমতা চান না নির্বাচনের আগে ভোটারদের, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের ভোটারদের মধ্যে নিজ দল সম্পর্কে কোন বিরূপ মনোভাব তৈরি হোক।

তিনি আরো জানান, রাজিবকে বৈঠকে পাঠালে ভোটাররা বিভ্রান্ত হবেন বলেও মনে করছে তৃণমূল সরকার।

কারণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় দুর্বল অবস্থায় রয়েছে তৃণমূল। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে তাদের চেয়ে কংগ্রেস ও সিপিআইএম প্রতিনিধিদের জনপ্রিয়তা বেশি।

প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পানি সরবরাহে কোনো ধরনের ঝুঁকি তৈরি হোক তা চান না তৃণমূল নেতা।

এর আগে ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও মমতার আপত্তিতে তা আটকে যায়।

বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জেআরসি বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে তিস্তা ও টিপাইমুখ বাঁধ ছাড়াও ফেনী নদীর অন্তর্বর্তীকালীন পানি বণ্টন চুক্তি, অভিন্ন নদী মুন, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার পানি বণ্টন চুক্তি, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন ও শুকনো মৌসুমে ফারাক্কায় গঙ্গার প্রবাহ বৃদ্ধি ও অভিন্ন/সীমান্তবর্তী নদীর তীর সংরক্ষণের বিষয়গুলো রাখা হয়েছে।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন গঠিত হয়। দুদেশের পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, পানি বণ্টন, সীমান্ত নদী ভাঙ্গন সমস্যা, বন্যা পূর্বাভাস সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান বিষয়ে এই কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হয়ে থাকে।

এখন পর্যন্ত জেআরসির ৩৭টি বৈঠক হয়েছে। ২০১০ সালের ১৭-২০ মার্চ কমিশনের ৩৭তম বৈঠক ভারতে হয়।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ও দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকের যৌথ ঘোষণায় মন্ত্রী পর্যায়ে জেআরসির বৈঠক আয়োজনে উভয় দেশের পানিসম্পদমন্ত্রীকে নির্দেশ দেয়া হয়।

এরপর জেআরসির ৩৭তম বৈঠকে সমতা, ন্যায় ও পারস্পরিক ক্ষতি না করার নীতির ভিত্তিতে ১৫ বছরের জন্য তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির খসড়া উপস্থাপন করে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারতও অক্টোবর-এপ্রিল মাসে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে একটি খসড়া চুক্তি উপস্থাপন করে।

পরবর্তীতে ২০১১ সালের ১০ জানুয়ারি এবিষয়ে সচিব পর্যায়ে একটি বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তিস্তা ও ফেনী নদীর অন্তর্বর্তীকালীন পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে উভয় দেশের জেআরসির সদস্যরা প্রস্তাবিত চুক্তির দুটি খসড়ার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন।

২০১১ সালের ৬-৭ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে যৌথ বিবৃতিতে ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে তিস্তা ও ফেনী নদীর অন্তর্বর্তীকালীন পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

এরই ধারাবাহিকতায় পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ