লতিফ সিদ্দিকীকে বহিস্কারের সিদ্ধন্ত প্রজ্ঞাপন, রাষ্ট্রপতির দপ্তরে
বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরও পদত্যাগ না করায় মন্ত্রিসভা থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে সময়ের বিতর্কিত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের এই সাংসদকে সংবিধানের ৫৮(২) ধারা বলে মন্ত্রিসভা থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আজই এবিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতির সাক্ষরের জন্য এ সংক্রান্ত একটি ফাইল বঙ্গভবনে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি সূত্র এসব বিষয় নিশ্চিত করেছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর লতিফ সিদ্দিকী নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে ‘নিউইয়র্ক টাঙ্গাইল সমিতির’ দেওয়া সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পবিত্র হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং সাংবাদিকদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। তার এসব মন্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বাংলাদেশের ধর্মপ্রান মুসলমানদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীরাও এর তীব্র সমালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় যুক্তরাজ্য সফরে ছিলেন। সফররত অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন।
এদিকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। শনিবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হরেয়ছে। আজ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনের জারি হতে পারে।’ রাষ্ট্রপতির সাক্ষরের জন্য এ সংক্রান্ত ফাইল বঙ্গভবনে পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা হজ পালন শেষে গতকাল শুক্রবার রাতে দেশে ফিরেছেন। লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দান সংক্রান্ত ফাইলে আজ দুপুরে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য বঙ্গভবনে পাঠানো হয়েছে। কিছু সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি এ ফাইলে স্বাক্ষর করতে পারেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে। করতে পারেন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রিত্বের অবসান ঘটবে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে টাঙ্গাইল সমিতির দেওয়া সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হজরত মুহাম্মদ (সা.), পবিত্র হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, প্রবাসী বাংলাদেশি ও সাংবাদিকদের বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন।
হজ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামাতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ এবং তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদেও কোনো কাজ নাই। এদেও কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। অ্যাভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ লোক হজে যায়, প্রত্যেকের ৫ লাখ করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়।’
হজের ব্যাখ্যায় মন্ত্রী বলেন, ‘আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ চিন্তা করলো এই জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কীভাবে চলবে। তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করলো যে, আমার অনুসারীরা প্রতি বছর একবার একসঙ্গে মিলিত হবে। এর মধ্য দিয়ে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে।’
তাবলিগ জামাতের সমালোচনা করে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘তাবলিগ জামাত প্রতি বছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদেও তো কোনো কাজ নাই। সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে বলেন, ‘কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন। জয় ভাই কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নন। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ারও কেউ নন।’