কোনোই ক্ষমতা নেই আইসিসির !
স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ পুরো নাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা—সংক্ষেপে যাকে বলা হয় আইসিসি। কাগজে-কলমে ক্রিকেট খেলাটির বৈশ্বিক অভিভাবক কিন্তু আদতে এসব ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা’ ‘অভিভাবক’ যে গালভরা অভিধা, সেটা নিজমুখেই স্বীকার করেছে আইসিসি। ব্যাপারটা অনুমিতই ছিল। কিন্তু আইসিসি নিজে থেকেই বলে দিয়েছে, ক্যারিবীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যে সম্পর্কচ্যুতির ঘোষণা দিয়েছে তাতে তাদের করার নেই কিছুই। প্রকারান্তরে আইসিসি কী এটাই বলে দিল না যে, ক্রিকেট বিশ্বে ভারতীয় মোড়লিপনার বিপরীতে ক্রিকেটের অভিভাবক হয়েও তারা নখদন্তহীন!
সিরিজের মাঝপথে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের সরে যাওয়ায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তাদের ওপর এমনই ক্ষিপ্ত যে বিসিসিআই যদি খুব তাড়াতাড়িই ক্যারিবীয় ক্রিকেটের ‘শেষ’ দেখে ছাড়ে তাহলে বলার কেউই নেই। এটা ঠিক যে ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের এই সিদ্ধান্তে বিসিসিআইকে যথেষ্ট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে, কিন্তু তাই বলে ক্যারিবীয় বোর্ডের সঙ্গে সব সম্পর্কচ্যুতির ঘোষণা যে কী পরিমাণ বিপজ্জনক এক সিদ্ধান্ত, সেটা তো ক্রিকেট সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এমন সবাই বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন। আর পুরো বিষয়টি যেহেতু ভারতীয় স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেহেতু এ ব্যাপারে নিজেদের অসহায়ত্ত প্রকাশ করে চুপ করে যাওয়াই শ্রেয় মনে করছে আইসিসি। অন্যান্য ক্রিকেট বোর্ডের অবস্থা তো সহজেই অনুমেয়। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে কিছু বলে নিজেদের বিপদ ডেকে আনতে চায় না কেউই। দেখলেন না, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয়দের ‘ডাক’ কীভাবে লুফে নিল শ্রীলঙ্কা! অথচ, অসময়ে ভারত সফরের ব্যাপারে নাকি প্রচণ্ড অনীহা ছিল লঙ্কান ক্রিকেটারদেরই।
অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে একটা ‘যৌথ সভা’র প্রত্যাশায় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। আসলে এই মুহূর্তে বিসিসিআইকে এই অনুরোধ জানান ছাড়া আর কিছুই করার নেই তাদের। বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই মুহূর্তে নিজেদের একঘরেই মনে করছে। অন্য কোনো ক্রিকেট বোর্ডের হস্তক্ষেপও তারা প্রত্যাশা করে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ ব্যাপারে আইসিসিরও কোনো পদক্ষেপ প্রত্যাশিত নয় ক্যারিবীয় বোর্ডের কাছে। কারণ তারা জানে ওই আইসিসির মেরুদণ্ড কতটুকু শক্ত আর সংস্থাটির ‘দৌড়’ কতদূর। আর তাই তো বিসিসিআইয়ের ‘হাতে-পায়ে’ ধরা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছে না তারা।
এমন পরিস্থিতিতে আইসিসি কেন নিশ্চুপ? ‘গভীর উদ্বেগ’ অবশ্য একবার তারা জানিয়েছে, কিন্তু তাতে কী লাভ! আইসিসির সেই উদ্বেগের থোড়াই কেয়ার করে বিসিসিআই। তাদের লক্ষ্য এখন ক্যারিবীয় বোর্ডকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়া। দুনিয়া উল্টে গেলেও তারা তা করবেই।
আইসিসি অবশ্য এ ব্যাপারে একটা ছোট্ট বিবৃতি ছেড়েছে। তবে সেই বিবৃতিতে এ ব্যাপারে তাদের অসহায়ত্তই প্রকাশ পেয়েছে। তারা বলেছে, তারা বিসিসিআই ও ক্যারিবীয় ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যকার এই দ্বন্দ্ব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা আশা করছে, এই বিরোধ খুব দ্রুতই পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে মিটে যাবে। কিন্তু একই সঙ্গে এও স্বীকার করেছে, এ ব্যাপারে তাদের কোনো কিছু করার ক্ষমতা একেবারেই নেই। পুরো বিষয়টি যদি তাদের কাছে নিয়ে আসা হয়, তাহলে তারা ব্যাপারটি ভেবে দেখতে পারে, অন্যথায় কোনো কিছুতে হস্তক্ষেপ করার বিষয়টি তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত।
আইসিসি জানিয়েছে, আগামী ১০ নভেম্বর দুবাইয়ে আইসিসির বৈঠকে এ ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা হবে। আপাতত তারা এ বিষয়ে কোনো কথা না বলারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফুটবলের কথা একবার ভাবুন তো। ফিফার সদস্য দুটি দেশ নিজেদের মধ্যে খেলা নিয়ে ঝগড়া করছে আর ফিফা তাতে হস্তক্ষেপ করেনি, এমন উদাহরণ বোধ হয় একেবারেই পাওয়া যাবে না।