১৭ বছর পর প্লট, তবে ৮ ফুট গর্তের নিচে

Rajuk রাজউকসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ১৯৯৭ সালে আবেদন করে ১৭ বছর পর প্লটের নিবন্ধন করা হলেও উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পে অনেক প্লট এখনো সাত-আট ফুট গর্তের নিচে। অনেক গ্রাহক এখনো প্লটই বুঝে পাননি। যাঁরা দীর্ঘ অপেক্ষার পর বুঝে পেয়েছেন, কোনো রকম উন্নয়ন না হওয়ায় বাড়িঘর নির্মাণ করা যাচ্ছে না। এলাকা ঘুরে, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া যায়।

প্রকল্পে মোট চার হাজার প্লট দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প শুরুর সময়ে প্রকল্প এলাকার আয়তন ছিল এক হাজার ৩৭৫ একর। পরে আরও জমি অধিগ্রহণের পর আয়তন দাঁড়ায় মোট দুই হাজার আট একর। প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ ছিল দুই হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। রাজউক সূত্রমতে, খরচ আরও বাড়তে পারে।

রাজউক সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী প্লট তৈরির পর গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তরের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে হয়। কিন্তু উন্নয়নকাজ শেষ করা দূরে থাক, ২০১১ সালে প্রাথমিক কাজ চলাকালে বিজ্ঞাপন দিয়ে তালিকা প্রকাশ করে রাজউক। গ্রাহকদের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে প্লট বুঝে নেওয়া এবং নিবন্ধন করার তাগিদও দেওয়া হয়। ওই সময়ে ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরে কিছু প্লট তৈরি থাকায় গ্রাহকেরা প্লট বুঝে নিয়ে নিবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকায় এখন পর্যন্ত তাঁরা কিছুই করতে পারেননি।

অনেক গ্রাহক আছেন, যাঁরা দুই বছর আগে প্লটের নিবন্ধন করালেও তাঁদের প্লট এখনো সাত-আট ফুট গর্তের মধ্যে। আবার কিছু ভরাট প্লট থেকে মাটি ও বালু তুলে রাস্তা ভরাট করা হচ্ছে। উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর ঘুরে এই চিত্র পাওয়া যায়। ১৭ কে সেক্টরের ৪ নম্বর সড়কের কাজ চলছে এখন। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যেসব প্লট বালু ভরাট করা হয়েছে, সেগুলোরই বালু উঠিয়ে রাস্তা ভরাট করা হচ্ছে।

ওই সেক্টরের ৪ নম্বর সড়কের ১৫, ১৭, ১৯ নম্বর প্লটের বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ১৯৯৭ সালে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেন। এঁদের মধ্যে একজন গ্রাহক প্রায় তিন বছর আগে সংবাদপত্রে রাজউকের বিজ্ঞাপনের তালিকায় নিজের প্লটটির নম্বর দেখতে পান। বিজ্ঞাপনে অনেক প্লটের সঙ্গে তাঁর প্লটেরও নিবন্ধন করার আহ্বান জানানো হয়। যথারীতি তিনি দাপ্তরিক সব নিয়মকানুন মেনে প্লটের নিবন্ধন করান।

ওই গ্রাহক বলেন, তাঁর প্লটটি নির্মাণাধীন রাস্তা থেকে কমপক্ষে আট ফুট নিচু। ভরাটকাজে সুবিধার জন্য তিনি প্লটের সীমানা দেয়াল দেন। তিনি বলেন, তাঁর প্লটে বালু ভরাটের জন্য তিনি প্রকল্পের দায়িত্বশীল একজন প্রকৌশলীর পেছনে প্রায় এক বছর ঘুরছেন। গত ১৯ জানুয়ারি ওই প্রকৌশলী তাঁকে এক মাসের মধ্যে প্লট ভরাট করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এরপর আট মাস চলে গেছে।

তথ্য ও বাস্তবতায় গরমিল: রাজউক নিজস্ব ওয়েবসাইটে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু রাজউকেরই দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তার মতে, ওয়েবসাইটের তথ্য আর বাস্তবতায় প্রচুর গরমিল রয়েছে। ছয় মাস আগের যে তথ্য দেওয়া আছে তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের উন্নয়ন হয়েছে প্রায় ৯২ শতাংশ। ১৫ নম্বর সেক্টরের উন্নয়ন শেষ। ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর সেক্টরেও ব্যাপক অগ্রগতি আছে। সড়কগুলোর উন্নয়ন হয়েছে ৬৫ শতাংশ। প্রকল্পভুক্ত ১২টি সেতুর মধ্যে দুটির কাজ শেষ। ছয়টি নির্মাণাধীন এবং বাকিগুলোর কাজ শিগগির শুরু হবে।

প্রকল্পের আওতাধীন উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টর থেকে ১৮ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত মাটি ভরাটের কাজ এখন পর্যন্ত মাত্র ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশ এলাকা শুকনো মৌসুমেও থাকে জলাভূমি হিসেবে। তবে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের পাশে অবস্থিত ১৫ নম্বর সেক্টরে এবং ১৬ নম্বরের অর্ধেক এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর হয়েছে আংশিক।

প্রকল্প এলাকায় রাস্তা থাকছে ১৬৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে মাত্র। রাস্তার এই অংশের বেশির ভাগই পড়েছে ১৫ নম্বরে। পুরো প্রকল্প এলাকায় ২১০, ১১০, ১০০, ৬০, ৩০ এবং সর্বনিম্ন ১৮ ফুট প্রশস্ত রাস্তার কথা আছে। ৩২টি ঠিকাদার দল বা গ্রুপে ভাগ করে রাস্তা নির্মাণের কাজ হচ্ছে। মাটি ভরাটের কাজে ২০০৫ সাল থেকে ৬২টি দল বা গ্রুপ কাজ করেছে।

প্রকল্প এলাকায় রয়েছে ১২টি ছোট-বড় সেতু। এগুলোর মধ্যে ১৫ নম্বর সেক্টর এলাকায় দুটির কাজ শেষ হয়েছে। এর একটি সোনারগাঁও-জনপথ প্রান্ত এলাকায়। ২০০ ফুট চওড়া এবং ৮০ ফুট লম্বা এই সেতু হচ্ছে ওই এলাকায় আগে থেকেই অবস্থিত ৬০ ফুট দীর্ঘ লেকের ওপর। আরেকটি সেতু তৈরি হচ্ছে সোনারগাঁও-জনপথের বাঁদিকে। এটিও লেকের ওপর এবং চওড়ায় ২০০ ফুট। বাকিগুলোর ছয়টির কাজ। ১৫ থেকে ১৮ নম্বর সেক্টরে মোট নয় কিলোমিটার লেক করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্ধেকও শেষ হয়নি। লেকপাড়ে পায়ে চলার পথও (ওয়াকওয়ে) হয়নি।
উন্নয়ন না হওয়ায় তদন্ত কমিটি: মাটি ভরাটসহ অন্যান্য উন্নয়নকাজে ধীরগতির জন্য ২০১৩ সালের শুরুতে একটি তদন্ত কমিটি করে রাজউক। রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে কমিটি প্রতিবদনে বলে, উন্নয়নের প্রধান বিষয় নির্ভর করে মাটি ভরাটের ওপর। কিন্তু ভরাটকাজ হয়েছে ধীরগতিতে।

গত ফেব্রুয়ারিতে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র ধরের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি করা হয়। সে কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
উত্তরা প্রকল্পের পরিচালক রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফিরোজ আহমদ বলেন, তার আগে অনেকেই প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। তিনি আসার পর চেষ্টা করছেন কাজের গতি বাড়াতে।

রাজউকের চেয়ারম্যান জি এম জয়নাল আবেদিন ভূঁইয়া বলেন, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে উন্নয়নকাজে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে। আর বেশি দেরি হবে না।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ