পুলিশের কাছেও নিরাপদ নয় নারী : তথ্যমন্ত্রী
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, পুলিশের কাছেও নারী নিরাপদ নয়। তাই নিয়োগের পরপরই পুলিশকে জেন্ডার সংবেদনশীলতার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে অ্যাকশনএইড পরিচালিত জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অ্যাকশনএইডের নিরাপদ নগর কর্মসূচির ভিত্তিমূলক জরিপে বলা হয়েছে, নারীরা নিজেদের চলাচলের জন্য শহরকে নিরাপদ মনে করেন না। ৮১ শতাংশ নারী পুলিশের সহায়তা নিতে ভয় পান। তাঁরা মনে করেন, পুলিশের সাহায্য চাইলে সমস্যা বাড়ে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নারী নির্যাতনে পুলিশ সঠিকভাবে কাজ করে না, এটা অনেকাংশে ঠিক। পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণ দরকার। রিক্রুটমেন্টের পরই তাদের জেন্ডার সংবেদনশীলতার ট্রেনিং দিতে হবে। কেন? ইয়াসমিনের ওপর পুলিশ নির্যাতন চালায়নি? তার মানে পুলিশের কাছেও আপনি নিরাপদ না।’
রাতের বেলায় নারীরা যেন নিরাপদে চলাচল করতে পারেন, সে জন্য টহল পুলিশে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীও পুলিশকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
আইভী বলেন, ‘থানার ওসিরা যেন আরও সচল হয়। ধর্ষণের শিকার নারীদের সহযোগিতা করুন, সম্মানের সঙ্গে কথা বলুন। ধর্ষক যে-ই হোক তাকে কঠিনভাবে দমন করুন।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত এই মেয়র আরও বলেন, সরকার যদি মনে করে যৌন হয়রানি রোধ করবে, তাহলে সরকার তা করতে পারে। নারী নির্যাতনকারীকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কেউ প্রধানমন্ত্রী অফিস, সংসদ, কোনো বড় নেতা যার সামনে যেখানে দাঁড়িয়েই যৌন হয়রানি করুক না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ষক কোন দল, কোন লীগ, সৈনিক লীগ না আরও কিছু করুক তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন উপমন্ত্রী লিন ফেদারস্টোন বলেন, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ কিশোরী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। এই হার অবিশ্বাস্য রকমের বেশি। যৌন হয়রানি বন্ধে নারী-পুরুষ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
অ্যাকশনএইডের কোষাধ্যক্ষ এম হাফিজউদ্দীন খান বলেন, যৌন হয়রানি বন্ধে সামাজিক মূল্যবোধের চর্চা করতে হবে এবং নারীদের জন্য নিরাপদ নগরের নিশ্চয়তা দিতে সব সময় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, গবেষণায় নারীর অনিরাপত্তার ভয়ংকর চিত্র উঠে এসেছে। নারীরা নগরে যে নিরাপদ নয়, তা এই গবেষণায় স্পষ্ট। নারীকে একটি নিরাপদ নগর দিতে সরকারকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।
‘নিরাপদ নগরী নির্ভয়ে নারী’ শীর্ষক ওই গবেষণাটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জ শহরের মোট এক হাজার ২০০ নারী-পুরুষের ওপর পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৮০০ জন নারী ও কিশোরী, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে এবং ৪০০ জন পুরুষ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক এম এ মান্নান বলেন, জরিপে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, সব বয়সের পুরুষেরাই যৌন হয়রানি করে থাকে। এর মধ্যে মধ্যবয়সীরাও রয়েছেন। একজন নারী একাধিকবার যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গড়ে একজন নারী তিন মাসে চার থেকে পাঁচবার অশোভন আচরণের শিকার হন, চার থেকে পাঁচবার অপরিচিতের কাছ থেকে কুপ্রস্তাব পান এবং দুই থেকে তিনবার অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শের মতো হয়রানির সম্মুখীন হন।
গবেষণায় উঠে আসা যৌন হয়রানি ও সহিংসতার মূল কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যৌন হয়রানি কমাতে আইনের অপর্যাপ্ততা ও প্রয়োগের ঘাটতি, যৌন হয়রানিকারীর সঠিক সময়ে এবং সঠিকভাবে বিচার না হওয়া, জটিল ও দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া, পুলিশ, হাসপাতাল কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিচারিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে জেন্ডার সচেতনতার অভাব।
নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হয়রানি কমাতে জরিপে কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। মূল সুপারিশগুলো হলো যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নতুন আইন করা এবং আগের আইনগুলোর সংশোধন করা। পুলিশ, হাসপাতাল, আদালত ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো যাতে সঠিক সেবা দেয়, সেটা নিশ্চিত করা।