স্বাস্থ্যসচিবের পর স্বেচ্ছা অবসরে পিএসসি সচিব
মনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি করে চাকরির মেয়াদ বাড়ানো আরেক সচিব এ কে এম আমির হোসেনও আজ বৃহস্পতিবার স্বেচ্ছা অবসরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব ছিলেন।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে স্বাস্থ্যসচিব মো. নিয়াজ উদ্দিন মিঞার স্বেচ্ছা অবসরে যাওয়ার চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়। আর আমির হোসেনের চিঠি দুপুরে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, মো. নিয়াজ উদ্দিন মিঞা ও এ কে এম আমির হোসেনকে পদত্যাগ করতে বা স্বেচ্ছা অবসরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
একই অভিযোগে সনদ বাতিল হওয়া অন্য দুজনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী গত ৩১ অক্টোবর অবসরে গেছেন। আর একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম তালুকদার বর্তমানে ওএসডি হিসেবে রয়েছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আমির হোসেনের চিঠিতে বলা হয়, ‘আমি ২৫ বছর চাকরি করেছি। এখন অবসরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছি।’
আর নিয়াজউদ্দিনের চিঠিতে বলা হয়েছে, শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বাস্থ্যসচিব মো. নিয়াজ উদ্দিন মিঞা অসুস্থ। তাই তিনি স্বেচ্ছা অবসরে যেতে যান। আগামী ৩১ ডিসেম্বর তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী স্বেচ্ছা অবসরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে চিঠি দেওয়া হলে তা চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে এবং তা পরিবর্তন বা প্রত্যাহারের অনুমতি দেওয়া যাবে না।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এ দুটি চিঠির সারসংক্ষেপ তৈরি করা হচ্ছিল। ফাইল দুটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এরপর তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয়ে ফেরত আসবে।
স্বাস্থ্যসচিব মো. নিয়াজ উদ্দিন মিঞাসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি করে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে গত ২২ জানুয়ারি ‘চাকরির শেষ সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ার হিড়িক’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মো. নিয়াজ উদ্দিন মিঞা মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে অসদাচরণের অপরাধ করেছেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় তাঁর সনদ বাতিল করে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি গত সপ্তাহে এর জবাব দেন। কিন্তু বাকি যাঁদের সনদ ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে, তাঁদের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মো. নিয়াজ উদ্দিন মিঞাসহ তিন সচিব ও এক যুগ্ম সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। দুর্নীতি দমন কমিশন ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সুপারিশে ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট বাতিল করে মন্ত্রণালয়। জামুকার বৈঠকে সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত হওয়ার নয় দিন পর মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে।