সাকিব কেন অনন্য ?
স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ টেস্ট আঙিনায় ১৪ বছর পার করতে চলেছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের কুলীন সমাজে বাংলাদেশের পথ চলাটা নিরন্তর সংগ্রামের। সাফল্যের তুলনায় ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী। টেস্টের পর টেস্ট বাংলাদেশ মাঠ ছেড়েছে নত শিরে। এত ব্যর্থতার ভিড়েও বাংলাদেশের গৌরব করার মতো কিছু বিষয় আছে। সেই গৌরবের সবচেয়ে বড় নামটা হতে পারেন সাকিব আল হাসান। সাকিব যেন আঁধার ঘরে চাঁদের আলো!
একটা সময় জিম্বাবুয়ের কাছে বাংলাদেশের হারাটাই ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। সময়ের পরিক্রমায় সে ‘সুদিন’ হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। এখন ওই এক জিম্বাবুয়ে বাদে বাকি আটটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষেই বাংলাদেশ ‘দুর্বল দল’। ১৪ বছর দলীয় অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য বলার মতো না হলেও একটা জায়গায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জয়-জয়কার! ২০০০ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নিয়েছেন—এমন ঘটনা পাঁচটি। এই পাঁচটির তিনটিই বাংলাদেশের দখলে।
২০০২ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস অপরাজিত ১৩৯ রান ও ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। ২০১১ সালে নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৩ ও ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বাকি তিনটি বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কীর্তি—২০১১-এর ডিসেম্বরে ঢাকা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৪ ও ৬ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। গত বছর অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সোহাগ গাজীর সেই ‘ঐতিহাসিক’ সেঞ্চুরি ও অপরাজিত ১০১ রান। আর সর্বশেষ খুলনা টেস্টে ১৩৭ রান ও দুই ইনিংসেই ৫ উইকেট সাকিবের।
বয়সে এখনো ২৮ পেরোয়নি, খেলেছেন কেবল ৩৬ টেস্ট—অথচ এ সময়েই সাকিব যা করেছেন, তা পারেননি কপিল দেব, রিচার্ড হ্যাডলির মতো কিংবদন্তিরাও। ইমরান খানের মতো কিংবদন্তি মাত্র একবারই এমন কীর্তি গড়তে পেরেছিলেন। কী করেছেন সাকিব? ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট একাধিকবার পাওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন সাকিব। এ তালিকায় রয়েছেন ইয়ান বোথাম (সর্বোচ্চ পাঁচবার), ক্যালিস, মুশতাক মোহাম্মদ ও গ্যারি সোবার্সের মতো কিংবদন্তিরা।
সাকিবের খেলা ৩৬ টেস্টের ২৫টিই হেরেছে বাংলাদেশ। অধিকাংশ সময়ই দলীয় ব্যর্থতায় ব্যক্তিগত অর্জন ম্লান হয়ে যায়। আত্মবিশ্বাসে লাগে বিরাট আঘাত। অথচ সাকিবকে দেখুন, কী তাঁর মনোবল, কী তাঁর আত্মবিশ্বাস! দলীয় ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে পড়েননি। দৃঢ় আত্মবিশ্বাসে দিনের পর দিন নিজের কাজটি যথাযথ করে গেছেন। এ কারণেই হয়তো বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার ‘আক্ষেপের সুরে’ কদিন আগে বলেছিলেন, ‘আমার একজন সাকিব ছিল না।’ শুধুই কি দলীয়? নিষেধাজ্ঞার ফাঁড়ায় পড়লে একজন খেলোয়াড় মানসিকভাবে কতটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, সেটি খেলোয়াড়মাত্রই জানেন। অথচ সাকিব কদিন আগের ব্যক্তিগত সংকট দ্রুত কাটিয়ে কী দুর্দান্তভাবে ফিরেছেন মাঠে!
দিন যত যাচ্ছে সাকিবের ধার ততই বাড়ছে। কতটা বাড়ছে—তা পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে। সাকিবের ৩৬ টেস্টের প্রথম ২১টিতে (২০১০ পর্যন্ত) রান করেছেন ১১৭৯, সেঞ্চুরি ১টি, ফিফটি ৫টি। গড় ৩১.০২। এ সময় উইকেট নিয়েছেন ৭৫টি। ৫ উইকেট পেয়েছেন সাতবার। সর্বশেষ ১৫ টেস্টে (২০১১ থেকে) রান করেছেন ১২৬২, সেঞ্চুরি ২টি, ফিফটি ১১টি। গড় ৪৮.৫৩। উইকেট নিয়েছেন ৫৯টি। ৫ উইকেট নিয়েছেন ছয়বার। পুরো ক্যারিয়ারে সাকিবের রান ২৪৪১, গড় ৩৮.১৪, সেঞ্চুরি ৩টি, ফিফটি ১৬টি। উইকেট ১৩৪। ৫ উইকেট পেয়েছেন ১৩ বার।
২০১১ সালের জানুয়ারির পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন অলরাউন্ডার ১০০০ রান ও ৫০ উইকেট পেয়েছেন—সাকিব তাঁর একজন। অপর দুজন স্টুয়ার্ট ব্রড ও ড্যারেন স্যামি। তিনজনের মধ্যে জাত অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিবই এগিয়ে। কারণ, ব্রড মূলত বোলার। এ সময়ে তিনি ৪০ টেস্টে খেলে লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে করেছেন ১০৯৭ রান। নিয়েছেন ১৬৫ উইকেট। স্যামি অবশ্য সাকিবের মতোই অলরাউন্ডার হিসেবে পারফর্ম করেছেন। তিনি ২৭ টেস্টে করেছেন ১০২২ রান, নিয়েছেন ৫৫ উইকেট। আর এ সময়ে মাত্র ১৫ টেস্টে সাকিবের রান ১২৬২, উইকেট ৫৯টি।
গত চার বছর অলরাউন্ডার হিসেবে বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে বড় অবদান সাকিবেরই। এ সময় দলীয় রানের ১৬ শতাংশ ও উইকেটের ৩০ শতাংশ জোগান দিয়েছেন দেশ-সেরা অলরাউন্ডার। এ সময়ে সাকিব একাধিকবার আইসিসি র৵াঙ্কিংয়ে শীর্ষ অলরাউন্ডার হয়েছেন। ব্যাট হাতে সাকিবের চেয়ে একমাত্র মুশফিকুর রহিম বেশি রান করেছেন। সাকিব এ সময়ে রান পেয়েছেন ১২৬২, মুশফিক ১৩১০ (১৯ টেস্টে)। অবশ্য গড়ে দুজনের চেয়ে এগিয়ে মুমিনুল হক। এ বাঁহাতির গড় ৫৬.৬১ (১১ টেস্টে)। সাকিবের ৪৮.৫৩ আর মুশফিকের ৪২.২৫। অন্যদিকে বল হাতে উইকেট প্রাপ্তির দিক দিয়ে সাকিবের ধারের কাছেও কেউ নেই। এ চার বছরে তিনি পেয়েছেন ৫৯ উইকেট। তবে বোলিং গড়ে সাকিবের চেয়ে এগিয়ে তাইজুল ইসলাম। অবশ্য তাইজুল খেলেছেন মাত্র ৪ টেস্ট, গড় ২৪.৩০, সাকিবের সেখানে ৩১.৩০।