পাবলিক লাইব্রেরিতে পুলিশ ফাঁড়ি !
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চত্বরে মরমি কবি সিরাজুল ইসলাম পাবলিক লাইব্রেরিতে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীসহ সব বয়সের লোকজন বই পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘হলুদিয়া পাখি সোনারই বরণ, পাখিটি ছাড়িল কে’? গানটিসহ অনেক জনপ্রিয় গানের রচয়িতা মরমি কবি সিরাজুল ইসলাম। তাঁর স্মরণে ২০০২ সালে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চত্বরে কবি সিরাজুল ইসলাম পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়। এই পাঠাগারে মরমি কবি সিরাজুলের রচিত অনেক গানের সংকলন, বই এবং তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন বই রাখা হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির পাঠকের জন্য বই ও জাতীয় পত্রিকা ছিল।
২০০৭ সালের শেষের দিকে পাঠাগারটি বন্ধ করে দিয়ে সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। সরিয়ে নেওয়া হয় বইপত্র।
শাক্তা এলাকার বাসিন্দা শ্যামল চন্দ্র দাশ বলেন, ‘পাঁচ-ছয় বছর আগেও আমরা পাঠাগারে এসে নিয়মিত পত্রিকা ও বই পড়তাম। কিন্তু সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করায় আমরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’ তিনি পাঠাগার থেকে পুলিশ ফাঁড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া এবং পাঠাগারটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান।
রাজাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা রহমান মোল্লা বলেন, ‘কবি সিরাজুল ইসলাম পাবলিক লাইব্রেরিতে একসময় অনেক দুর্লভ বই পাওয়া যেত। কিন্তু পাঠাগারে পুলিশ ফাঁড়ি হওয়ায় সে বইগুলো আমরা এখন আর পড়তে পারছি না। জনগণের স্বার্থে পাঠাগার থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেওয়া দরকার।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে কোনাখোলা পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল মো. মজিদ বলেন, ‘আমরা এখানে এক রুমে গাদাগাদি করে ১৪ জন পুলিশ সদস্য থাকি। এখানে থাকতে আমাদের খুব সমস্যা হয়। তা ছাড়া আমাদের নিজেদের জন্য একটি স্থায়ী ভবন করে দিলে ভালো হয়।’
মরমি কবির মেজো ছেলে তৌহিদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার বাবা দেশের মানুষের জন্য কি কিছুই করেননি? পুলিশ প্রশাসন পাঠাগার বন্ধ করে সেখানে ফাঁড়ি স্থাপন করেছে।’
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, শিগগিরই পুলিশ ফাঁড়িটি পাঠাগার থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। পুলিশ ফাঁড়ির জন্য উপজেলা চত্বরে নতুন ভবন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
কেরানীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কোনাখোলা পুলিশ ফাঁড়িটি স্থানান্তরের জন্য বিকল্প চিন্তাভাবনা করছি। যদি খাসজমি পাওয়া যায়, তবে সেখানে ফাঁড়িটি স্থানান্তার করা হবে।’