নেরিকা ধানবীজ কার স্বার্থে: মির্জা ফখরুল
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ কম ফলনশীল আফ্রিকার ‘নেরিকা’ জাতের ধানবীজ কৃষকদের মারাত্মক ক্ষতি করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষক দল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর একান্ত আগ্রহে অনেক টাকা খরচ করে এ বীজ আনা হয়। কার স্বার্থে এ বীজ আমদানি করা হয়, তা দেশবাসী জানতে চায়।
নেরিকার ফলন হেক্টরপ্রতি সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৭ টন। কিন্তু ‘ব্রি’ উদ্ভাবিত যেকোনো উফশী জাতের ধানের উৎপাদন চার টন বলে দাবি করেন ফখরুল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অভিযোগ করেন, কৃষিকে অবহেলার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এবার আমনে কৃষকেরা বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। কৃষকের গোলায়, চাতাল ও গুদামে লাখ লাখ টন নতুন ধান-চাল রয়েছে। এরপর সরকারিভাবে ও সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট আমদানিকারকেরা চাল আমদানি করে কৃষকদের পথে বসিয়েছেন।
চাল আমদানির কারণে কৃষকেরা এখন ৬৪০ থেকে ৬৬০ টাকায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে—এমনটা দাবি করে ফখরুল বলেন, প্রতি মণ আমন ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা। এতে প্রতি বিঘায় কৃষকের গড়ে লোকসান হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।
ফখরুলের ভাষ্য, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৪ লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। কিন্তু সরকার চাল আমদানির কথা অস্বীকার করছে।
একদিকে উদ্বৃত্ত উৎপাদন ও রপ্তানির কথা বলছে, অন্যদিকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারত থেকে চাল আমদানি করছে। সরকার কেন এমনটা করছে, তা জানতে চান মির্জা ফখরুল।
১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলে দেশে এক কোটি কৃষকের মধ্যে কৃষিঋণ বিতরণকে ডাকাতির সঙ্গে তুলনা করে ফখরুল দাবি করেন, কৃষকের মধ্যে ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ শতাংশ সুদে ট্রাস্ট ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা দেবে। ট্রাস্ট ব্যাংক ‘সজাগ’ নামের একটি এনজিওর মাধ্যমে ১৯ শতাংশ সুদে কৃষকের মধ্যে এই ঋণ বিতরণ করবে। বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার কোথাও এত উচ্চ সুদে লেনদেনের ঘটনা নেই।
কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রতিষ্ঠান বিএডিসি এখন মূলত সার কেনাবেচা ও সরকারি দলের লোকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল। তিনি বলেন, সরকারের ভুল নীতির কারণে ইতিমধ্যে ৬০ হাজার পোলট্রি ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণে ব্যাপক দুর্নীতি ও পরিচালনাগত ব্যর্থতার কারণে অসংখ্য ডেইরি খামার বন্ধ রয়েছে। মৎস্য চাষ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
‘সুন্দরবন ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে’ বলে দাবি করেন ফখরুল। তিনি বলেন বিশেষজ্ঞদের মতে, রামপালে ভারত থেকে আমদানিকৃত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এটি করা হয়েছে। এ জন্য ফার্নেস তেলবাহী ট্যাংকার ইচ্ছাকৃতভাবে ডোবানো হয়েছে, অনেকে এমনটা বলেছেন বলেও জানান তিনি। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ও মদদদাতাদের গ্রেপ্তারের দাবি করেন।
কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ন্যায্যমূল্যে ধান-চাল ক্রয়, ভারত থেকে চাল-ভুট্টা আমদানি বন্ধ, ডিজেল-সার-বীজসহ কৃষি উপকরণের দাম কমানো ও সেচে বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
এরপর কৃষক দলের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আট দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৩ ডিসেম্বর সব জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকরিপি প্রদান, ২৪ থেকে ২৮ ডিসেম্বর বিভাগীয় পর্যায়ে আলোচনা সভা, ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় আলোচনা, ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন ও দলের প্রতিষ্ঠাতার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন।