হারিছ, আরিফুলসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

Hobiganj হবিগঞ্জসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, হবিগঞ্জঃ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত।
একই সঙ্গে বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির নেতা আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গোলাম কিবরিয়া গউছসহ পলাতক ১১ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
অভিযোগপত্র গ্রহণকে কেন্দ্র করে আদালত এলাকা ও হবিগঞ্জ শহরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে ছাত্রদল-যুবদলের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।
আজ রোববার দুপুরে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতের হাকিম রশিদ আহমেদ এই মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক ১১ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
গত ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুননেসা পারুল হবিগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে এই সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অ
ভিযোগপত্রে আরিফুল হক ও গোলাম কিবরিয়ার নাম-ঠিকানায় ভুল থাকায় তা সংশোধনে গত ৩ ডিসেম্বর আদালতে আবেদন করে সিআইডি। এ বিষয়ে ২১ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। আজ শুনানি নিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে হারিছ চৌধুরী, আরিফুল হক, গোলাম কিবরিয়া ছাড়াও মাওলানা তাজউদ্দিনের ভগ্নিপতি হাফেজ মো. ইয়াহিয়া, আবু বকর করিম, দেলোয়ার হোসেন রিপন, শেখ ফরিদ, আবদুল জলিল এবং শেখ আবদুল সালামকে নতুন করে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫।
২০০৫ সালে ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। একই ঘটনায় আরও নিহত হন স্থানীয় আওয়ামী লীগের চার নেতা-কর্মী। আহত হন ৭০ জন। এ ঘটনার পরদিন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক) ও সাংসদ আবদুল মজিদ খান হবিগঞ্জ সদর থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।
তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের ৫০ দিন পর ২০০৫ সালের ২০ মার্চ প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান। এতে আসামি করা হয় ১০ জনকে। এঁরা হলেন শহীদ জিয়া শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল কাইয়ুম, ব্র্যাক ব্যাংকের স্থানীয় কর্মকর্তা আয়াত আলী, সাইনবোর্ড লেখক কাজল মিয়া, জেলা ছাত্রদলের সহদপ্তর সম্পাদক সেলিম আহমেদ, স্কুলশিক্ষক শাহেদ আলী, তাজুল ইসলাম, একই এলাকার জয়নাল আবেদীন জালাল, লস্করপুর বিএনপির নেতা জমির আলী, ডাকপিয়ন জয়নাল আবেদীন মোমিন ও ছাত্রদলকর্মী মহিবুর রহমান।
২০১১ সালের ২০ জুন দ্বিতীয় দফায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম। এতে নতুন করে আসামি করা হয় ১৬ জনকে। একই সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সম্পৃক্ততা খুঁজে পান তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে নতুন করে যাঁদের আসামি করা হয় তাঁরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হুজি নেতা মুফতি হান্নান, মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি সফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, আবু জান্দাল, মহিব উলাহ, শরীফ সাহেদুল আলম, হাফেজ সৈয়দ নাঈম আহমদ আরিফ, বদরুল আলম মিজান, মিজানুর রহমান, আবুল মাজেদ বাট, দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ আলী, হাসান উল্লাহ ও ইউসুফ বিন শরীফ।
প্রথম ও দ্বিতীয় দফা অভিযোগপত্র নিয়ে আপত্তি করেন কিবরিয়ার পরিবার ও বাদী। তাঁদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিবরিয়ার পরিবার ও সেই সময়কার হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এমদাদুল হকের সঙ্গে কথা বলা, মূল পরিকল্পনাকারী শনাক্ত করা, মদদদাতা ও আশ্রয়দাতা এবং গ্রেনেডের উৎস বের করাসহ পাঁচটি নির্দেশনা দিয়ে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন সিআইডিকে।
সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেরুন নেসা ২০১২ সালের ২০ মার্চ থেকে এ আলোচিত মামলার তদন্ত কাজ করেন।
তৃতীয় দফায় নতুন নয়জনসহ মোট ৩৫ জনের নাম দেওয়া হয়। এঁদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও মুফতি হান্নানসহ বর্তমানে ২১ জন আটক রয়েছেন। আর বিএনপির নেতা হারিছ চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী, গোলাম কিবরিয়া গউছসহ ১৪ জনকে পলাতক দেখানো হয়।
এই ১৪ জনের মধ্যে ইউসুফ বিন শরীফ ও আবু বকর ওরফে কবিরের কোনো ঠিকানা পাওয়া যায়নি। হাসান উল্লাহ ভারতে ক্রসফারারে মারা গেছেন। তাঁদের ব্যাপারে আজ ​আদালত কোনো আদেশ দেননি।
তদন্ত কর্মকর্তা মেহেরুন নেসার ভাষ্য, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অধিকতর তদন্তে গ্রেনেডের উৎস বের করা হয়েছে। মাওলানা তাজউদ্দিন ও আবুল মাজেদ বাট এ গ্রেনেডের জোগানদাতা। জনসভায় তা নিক্ষেপ করেন বদরুল আলম মিজান।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মুফতি আবদুল হান্নান, আবুল মাজেদ বাট, সৈয়দ নাঈম আহমেদ আরিফ, শরীফ সাহেদুল আলম, দেলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান ও আবদুল সালাম এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ