হাজারো মানুষের চোখের জলে জিহাদের দাফন
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ পানির পাইপের ভেতরে মাথায় আঘাত ও পানিতে ডুবে মারা যাওয়া জিহাদকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া গ্রামে সন্ধ্যা ছয়টায় পারিববারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার জানাজায় অংশ নিতে আসা লোকজন, যাদের অসর্তকতায় জিহাদের করুণ মৃত্যু হয়েছে, তাদের শাস্তি দাবি করেন।
গত শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে অন্য শিশুদের সঙ্গে বাসার পাশেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত পানির পাম্পের কাছে খেলতে যায় জিহাদ। একপর্যায়ে পাম্পের একটি দেড় ফুট ব্যাসের পাইপে পড়ে যায় সে। চলে যায় গভীরে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ওই পাইপের গভীরতা ৫০০ ফুট। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ৪০০ ফুট। কেউ বলে ৬০০ ফুট। ফায়ার সার্ভিসের দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে শিশু জিহাদকে উদ্ধার করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত গতকাল শনিবার বেলা তিনটার দিকে একদল উদ্যমী তরুণের চেষ্টায় জিহাদকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পরে চিকিৎসক জানান, অনেক আগেই সে মারা গেছে।
আজকের ময়নাতদন্ত শেষে জিহাদের মরদেহ আসবে—এমন খবর পেয়ে হাজারো লোক জড়ো হয় নাগেরপাড়া গ্রামে। নাগেরপাড়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জিহাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে—এ খবর আগেই প্রচার করা হয় মাইকে। বিকেল সাড়ে চারটার সময় জিহাদের মরদেহ বহনকারী গাড়িটি বিদ্যালয় মাঠে পৌঁছায়। তাকে এক নজর দেখার জন্য মাঠে অপেক্ষারত মানুষ কফিনের কাছে ভিড় করে। এ সময় উপস্থিত অনেকেই চোখে জল ধরে রাখতে পারেনি। বিকেল পাঁচটায় ওই মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বিকেল চারটার দিকে ডামুড্যা উপজেলার শীতলকাঠি গ্রামে তার নানাবাড়িতে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জিহাদের মরদেহ আসার খবর পেয়ে নাগেরপাড়া গ্রামে উপস্থিত হন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস, গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন্নাহার, সহকারী পুলিশ সুপার সুমন দেব প্রমুখ। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক দাফনের খরচ বাবদ জিহাদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
জিহাদের বাবা নাছির ফকির ১২ বছর আগে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া গ্রাম ছেড়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান। চাকরি করেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নৈশপ্রহরী হিসেবে। পরিবার নিয়ে থাকেন কমলাপুর রেলওয়ে কলোনিতে।
আজ দুপুরে জিহাদের গ্রামের বািড় নাগেরপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, তার দাদা আজিজ ফকির, চাচা রতন ফকির, ফুফু সুফিয়া বেগম বিলাপ করছে। গ্রামের মানুষ তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। বাড়ির দক্ষিণ কোণে জিহাদকে দাফন করার জন্য কবর খোঁড়া হয়।
জিহাদের দাদা আজিজ ফকির বলেন, মানুষের এমন উদাসীনতা ও অসর্তকতায় আর যেন কারও স্বজনকে না হারাতে হয়।
নাগেরপাড়া গ্রামের লিয়াকত দপ্তরি বলেন, ‘যাদের অবেহলা ও অসর্তকতায় জিহাদের মৃত্যু হয়েছে, আমরা শরীয়তপুরবাসী তাদের শাস্তি চাই।’
নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এনায়েত করিম বলেন, ‘জিহাদের এমন করুণ মৃত্যুতে এলাকার সব মানুষ শোকে কাতর। রেলওয়ে কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতায় আমরা ক্ষুব্ধ। জিহাদের এ করুণ পরিণতির জন্য যারা দায়ী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’