সুন্দরবনের ভেতরে নৌ চলাচল স্থায়ী বন্ধের সুপারিশ
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশ থেকে বন হারিয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক বন হলো সুন্দরবন। এটিকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখতে বনের ভেতর দিয়ে নৌপথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে একটি জাতীয় দৈনিকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞরা সুন্দরবনের ভেতরে নৌপথ বন্ধের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, বন্দরে যাওয়ার একটিই পথ হচ্ছে সুন্দরবনের ভেতরের শ্যালা নদী। অন্য কোনো পথ আছে কি না, তা সরকার খতিয়ে দেখছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের আটটি দেশের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত জাতিসংঘের ২৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল গত ২২ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনে অবস্থান করে। তাঁরা সেখানে শ্যালা নদী ও পশুর নদের বিভিন্ন স্থানে তেল ছড়িয়ে পড়ার প্রভাব নিয়ে জরিপ চালান। কীভাবে তেল অপসারণ করা যায়, সেই পরামর্শ দিতেই সরকারের আমন্ত্রণে দলটি কাজ করেছে। বাংলাদেশের ১২ জন বিশেষজ্ঞ এই দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । দলের সদস্যরা বলেন, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে তেল ট্যাংকার পরিবহন সুন্দরবনের পরিবেশ ও বনজীবীদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলের নেতা ফিনল্যান্ড থেকে আসা এমিলিয়া ওয়ালস্টর্ন, দলটির সমন্বয়কারী পার এনডার্স বার্থলিন, ফ্রান্সের রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রধান (সার্ভিস রিসার্চ) স্টেফান লোফলক, বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিনিধি লোয়িক কেরামব্রুন, হারুকা ইজাকিসহ অন্যরা সুন্দরবনে তাঁদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানকার স্থানীয় মানুষ, সরকার, বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যম যেভাবে সমন্বিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, তার প্রশংসা করেন তাঁরা। তাঁদের মতে, সুন্দরবনের অভিজ্ঞতা জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা। সুন্দরবন রক্ষায় আর্ন্তজাতিক মহলের সহমর্মিতার বিষয়টিও তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন।
সভায় তেলের ট্যাংকারডুবির পর সেখানকার ক্ষতি, প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেন দলের সদস্যরা। তাঁরা বলেন, ঘটনার পর যতটা আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, আপাতদৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে ততটা ক্ষতি হয়নি। তবে তেল ছড়িয়ে পড়ার ফলে তার প্রভাব কতটুকু হলো, তা এই মুহূর্তেই বা কয়েক দিনের জরিপের মাধ্যমে বলাও সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের কথা মাথায় রাখতে হবে। সেই লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন এবং নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক বদরুল ইমাম বলেন, ‘সুন্দরবনে অবস্থানের সময় আমি যেন আমার ছাত্রজীবনে চলে গিয়েছিলাম। আমার জীবনে সুন্দরবনের অভিজ্ঞতা “লার্নিং চ্যাপ্টার” হয়ে থাকবে। ঘটনা ঘটার পর গণমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে ইতিবাচক, নেতিবাচক বিভিন্ন দিক নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলটি বস্তুনিষ্ঠভাবে জরিপ চালিয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। এখন বিষয়টিতে নজরদারি বাড়াতে হবে।’
দুবাই সিটি করপোরেশনের উপদেষ্টা বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলী রেজা খান বলেন, ‘সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি সবার কাছেই নতুন। বিষয়টি থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে। সরকারকেও সতর্ক হতে হবে।’
সেন্টার ফর ইনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের উপনির্বাহী পরিচালক মনিমুল হক সরকার বলেন, সুন্দরবন এলাকায় চিংড়ি ঘেরের কারণে নদীর নাব্যতা ও নৌ চলাচলের সমস্যা হচ্ছে। এসব চিংড়ি ঘের সরিয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া সুন্দরবনের ভেতরের নৌপথ বন্ধ করে দিতে হবে।
ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) এ-দেশীয় সহকারী পরিচালক খুরশিদ আলম সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সুপারিশে সুন্দরবনের ভেতরে নৌপথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
আলোচনায় ইউএনডিপির প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট (এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি) আলমগীর হোসেন বলেন, তেলের ট্যাংকারডুবির ঘটনায় কোনো প্রভাব পড়েনি, তা বলা যাবে না। এ বিষয়ে আরও গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে।