ফোন বিবৃতিতে বিব্রত বিএনপি
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিজেপির সভাপতির কথিত ফোনকল, মার্কিন কংগ্রেসের ছয় সদস্যের ভুয়া বিবৃতি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে বিএনপি। পাশাপাশি নেতাদের অনেকে আছেন বিভ্রান্তিতে। এ নিয়ে রাজনীতির মাঠে নতুন করে চাপে পড়েছে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাঁরা কেউ উদ্ধৃত হতে রাজি হননি। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলে, এই দুটি ঘটনায় তাঁরা বিব্রত ও বিভ্রান্ত। তিনি মনে করেন, মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের বিবৃতিটি ভুয়া। কিন্তু অমিত শাহের ফোনের বিষয়টি খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার করা রহস্যজনক। কথা না হলে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানোর কথা নয়। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে অমিত শাহর বক্তব্য প্রচার করার পর এখন বিএনপির নেতাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এটিও মিথ্যা।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, আন্দোলনের বিপরীতে সরকারের কঠোর অবস্থান, মামলা-গ্রেপ্তার, চেয়ারপারসনকে অবরুদ্ধ করে রাখা-এ সব মিলিয়ে বিএনপি কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। এ অবস্থায় মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের বিবৃতি ও ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের ফোন সত্যি হলে বিএনপির জন্য কৌশলগতভাবে ইতিবাচক হতো। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস ও র্যাঙ্কিং মেম্বার এলিয়ট অ্যাঙ্গেল বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাঁদের নামে প্রচারিত বিবৃতিটি নিজেদের নয় বলে জানিয়েছেন। রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের জন্য কোনো দলের এই ভুয়া বিবৃতি ব্যবহারের চেষ্টাকে তাঁরা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন। তাঁদের এই অবস্থান বিএনপির জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ এতে পারস্পরিক আস্থা নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে গণমাধ্যমের কারণে এটি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, অমিত শাহর সঙ্গে খালেদা জিয়ার কথা হয়নি। এ অবস্থায় সরকার ও আওয়ামী লীগ একটি নতুন অস্ত্র পেয়েছে। তারা এখন এটি প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে যে, বিএনপি মিথ্যার রাজনীতি করছে। মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের ওপরও এসবের একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাদের হতাশা বেড়ে যেতে পারে। কারণ এতে এটি প্রমাণ হয় যে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন নেই। থাকলে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হতো না।
তবে আসলেই গণমাধ্যমগুলো অমিত শাহর সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে কি না তা নিয়ে বিএনপি নেতাদের অনেকের সংশয় আছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, কয়েকটি টেলিভিশন অমিত শাহর ছবি দেখিয়ে একটি টেলিফোন ভয়েস শুনিয়েছে। এটি আসলেই অমিত শাহ কি না তা নিয়ে সংশয় থকে যায়। তবে তিনি মনে করেন, অমিত শাহর সঙ্গে কথা হয়ে থাকলেও বিএনপির পক্ষ থেকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে জানানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। তিনি বলেন, ‘অমিত শাহ কি আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন? হোয়াই অমিত শাহ ইজ সো ইমপর্টেন্ট। ’ তাঁর মতে, অমিত শাহর সঙ্গে ফোন আলাপ নিয়ে দেশের রাজনীতি ও গণমাধ্যমে যা হচ্ছে তা দেউলিয়াপনা ছাড়া আর কিছু নয়।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো আসলেই অমিত শাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কি না-তা নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খানও পরোক্ষভাবে প্রশ্ন তুলেছেন। গত শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে মারুফ কামাল বলেছেন, ‘আমদের যে সব সংবাদ মাধ্যম আমার তথ্যকে ভুল প্রমাণের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য ও সততা সম্পর্কে আমি কোনো প্রশ্ন তুলতে চাই না। বিজেপি প্রধান প্রকৃতপক্ষেই তাদেরকে কোনো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলছি না। তবে শ্রীযুক্ত অমিত শাহর সঙ্গে সম্পর্কিত ঘনিষ্ঠদের কাছে আজ আমাদের অনুসন্ধানে এটুকু বেরিয়ে এসেছে যে, বর্তমানে নির্বাচনী প্রচারাভিযান ও দলের সদস্য সংগ্রহ কাজে গুরুতরভাবে ব্যস্ত বিজেপি প্রধানের পক্ষে ঢাকার কোনো সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার প্রদানের কোনো সুযোগ ছিল না। ’
গত বৃহস্পতিবার মারুফ কামাল খান সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, গত বুধবার রাতে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহ ফোন করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন। পরদিন আওয়ামী লীগ দাবি করে, এ তথ্যটি সঠিক নয়। কিন্তু বিএনপি তাদের দাবিতে অনড় থাকে। পরবর্তীতে কয়েকটি গণমাধ্যম সরাসরি অমিত শাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে। অমিত শাহ জানান, টেলিফোন আলাপের খবরটি মিথ্যা। গত শুক্রবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার নিন্দা জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় ওইটি ছিল ভুয়া বিবৃতি।
এর আগে ২০১৩ সালের ৩০ জুন ওয়াশিংটন টাইমস-এ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে ‘দ্য থ্যাঙ্কসলেস রোল ইন সেভিং ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ, করাপশন অ্যান্ড স্টেলিং থ্রেটেন আ ওয়ানস ভাইব্রেন্ট নেশন’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেসময় এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল বিএনপি। পরে দলটি দাবি করেছিল ওই লেখাটি খালেদা জিয়ার নয়। ওয়াশিংটন টাইমস অবশ্য দাবি করেছিল লেখাটি খালেদা জিয়ারই।