বৃষ্টিতে ভরসা
বর্ষা, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বৃষ্টি শুরু হলে ছাতা বা বর্ষাতির অভাবে কাজ ফেলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হয়। এই ঋতুতে বৃষ্টি সামলেই সারতে হবে বাইরের কাজ। আষাঢ়ের আকাশের অবস্থার সঙ্গে পাল্টে নিতে হয় জীবনযাপন। পোশাক-আশাক, সাজ, জুতা, ব্যাগ সব কিছু হতে হবে বর্ষা উপযোগী।
সঙ্গে রাখা চাই ছাতা বা রেইনকোট। বর্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের একটু বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখতে হয়। আকাশের অবস্থা বুঝে সুতি, সিফন, সিল্ক শাড়ি পরুন।
“সুতির সালোয়ার-কামিজের বদলে সিনথেটিক কাপড়ের পোশাক পরতে পারলে ভালো। কারণ যখন-তখন ধোয়া যায়, ভিজলেও তাড়াতাড়ি শুকায়।” বলছিলেন বিবিয়ানার কর্ণধার লিপি খন্দকার।
তিনি আরও জানান, “রং উঠে যায় এমন পোশাক একেবারেই নয়। নীল, গোলাপি, হলুদ, কমলা এবং উজ্জ্বল রংয়ের পোশাক পরার চেষ্টা করুন। আর রুবিয়া বা সুতির ব্লাউজের সঙ্গে যায় এমন শাড়ি পরুন।”
পোশাক
বুটিক ও ফ্যাশন হাউজগুলো এনেছে বর্ষার পোশাক। আছে টি-শার্ট, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, শাড়ি, শার্ট, পাঞ্জাবি, থ্রি পিস ও শিশুদের বর্ষার পোশাক।
নরম ও আরামদায়ক সুতির সঙ্গে শিফন, সিল্ক, এন্ডি, খাদি ও তাঁতের কাপড়ে তৈরি করা হয়েছে পোশাক। যেগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে বর্ষার থিম রং নীল। আরও ব্যবহার হয়েছে কমলা, হলুদ, সাগরনীল, সবুজ, ফিরোজা, বাদামি, জলপাইসহ উজ্জ্বল সব রং।
টি-শার্টেও ফুটে উঠে বর্ষার বিভিন্ন দৃশ্য। স্ক্রিনপ্রিন্ট করে আঁকা হয়েছে ব্যাঙ ও বর্ষাকাল, বর্ষা ও কদমফুল, বর্ষা ও ছাতা, বৃষ্টি ও গ্রামের পথ, মেঘ, ফসলের মাঠে বৃষ্টি, নগরে বৃষ্টি ইত্যাদি দৃশ্য।
বর্ষায় তারুণ্যের পোশাকের তালিকায় প্রথমেই থাকে টি-শার্ট। এই পোশাকে ক্রেতাদের আগ্রহ বিবেচনা করে বর্ষাকে তুলে ধরা হয়।– জানান বুটিক হাউজ ‘পঙ্ক্তি’র আবদুল্লাহ আল আমিন।
এবার টি-শার্টে প্রাধান্য পেয়েছে হালকা মোটিফের কাজ। মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়েছে হাতের কাজ ও প্রিন্ট।
রঙয়ের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, “বর্ষায় অল্প কাজ করা হালকা পোশাক পরা ভালো। যাতে বৃষ্টিতে ভিজলে সহজে শুকিয়ে যায়।”
দাম : সব বুটিক ও ফ্যাশন হাউজেই টি-শার্ট পাওয়া যায়। দাম ১৫০-১৭০ টাকা।
রেইনকোট
মেয়েদের ফ্যাশনেবল রেইনকোট মানেই রং হবে হালকা। আর ছেলেদের গাঢ় রং। যারা মটরসাইকেল চালান তাদের জন্য আছে ফুলপ্যান্টসহ বর্ষাতি। শিশুদের জন্য আছে রঙিন রেইনকোট।
ভালো মানের বর্ষাতির মধ্যে আছে ডার্বিসুপার, কমফোর্ট, ফেদার, ব্রিদেবল, রেড চ্যাম্পিয়ন ইত্যাদি। আবার দেশি পলিয়েস্টার, ওয়াটারপ্রুফ, ফিলিপস, প্যারাসুট, বিগবসও বেশ টেকসই ও কাজের।
দাম : মেয়েদের ৫শ-১৫শ টাকা। ছেলেদের ৬শ-১২শ টাকা। শিশুদের ২শ-৪৫০ টাকা। মটরসাইকেল চালকদের ৮০০-২হাজার টাকা।
পলওয়েল মার্কেট, নিউ মার্কেট, বায়তুল মোকাররম, স্টেডিয়াম মার্কেট, মুক্তবাংলা শপিং ও পুরান ঢাকার ইমামগঞ্জে পাওয়া যায় বিভিন্ন মানের রেইনকোট।
ছাতা
বাজারে তিন ধরনের ছাতা পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ভাঁজযোগ্য ছাতাই ফ্যাশনেবল। দুই ও তিন ভাঁজযোগ্য ছাতা সহজে ব্যাগে বা পকেটে রাখা যায়। ছোট ও বয়স্কদের জন্য আছে শিকযুক্ত অভাঁজযোগ্য ছাতা। এসব ছাতায় ব্যবহার হয়েছে বিভিন্ন নকশা করা পানিনিরোধক কাপড়। শিশুদের ছাতার কাপড়ে আছে ফুল, ফল, মাছসহ বিভিন্ন প্রাণীর ছবি ও আঁকা কার্টুন।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছাতার মধ্যে আছে এটলাস, রিভেরি, পস, মুন, মার্টিরন, অ্যাপেক্স, গোল্ডফিশ, চেরি, ব্রাদার্স, শরীফ, রহমান ইত্যাদি।দাম : সাধারণ ছাতা ১২০-৩শ টাকা। দুই ভাঁজ ৩৫০-৮শ ও তিন ভাঁজ ৭৫০-১২শ টাকা। বাচ্চাদের ছাতার দাম ২শ-৫শ টাকা।
অ্যাগোরা, মীনাবাজার, ফ্যামিলি নিডসসহ বিভিন্ন চেইনশপগুলোতে পাওয়া যাবে ছোটদের ছাতা। বড় শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে পাওয়া যাবে ফ্যাশনেবল ছাতা। এ ছাড়া হরেক রকম ছাতা মিলবে গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, চকবাজার ও নিউ মার্কেটে।
জুতা
“বর্ষায় নিচু হিলের রাবারের জুতা বেছে নিন। এ মৌসুমে চামড়া বা কাপড়ের জুতা অনুপযোগী। কারণ একবার ভিজলে জুতাতো নষ্ট হবেই, সেই সঙ্গে ভাজা জুতা থেকে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। পুঁতি ও জরি বসানো জুতা কাদায় নোংরা হয় তাড়াতাড়ি।” বললেন বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজির প্র্রভাষক (টেক) নূর মোহাম্মদ।
বাজারে এসেছে রাবার, রেক্সিন ও স্পঞ্জের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা এবং স্যান্ডেল। যা পানিতে ভিজলেও নষ্ট হয় না। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন ধরনের পানিরোধক গামবুট।
স্টাইলিশ বর্ষার জুতা পাবেন এলিফ্যান্ট রোড, ইস্টার্ন প্লাজা, রাপা প্লাজা, রাইফেলস স্কয়ার ও বসুন্ধরা সিটিতে। নিউমার্কেট ও গাউছিয়ার ফুটপাতে মিলবে বর্ষার স্যান্ডেল এবং স্লিপার। পাদুকা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাটা এনেছে বিভিন্ন ডিজাইনের স্যান্ডেল। গ্যালারি এপেক্সে পাবেন গামবুট।
দাম : আকারে ছোট গামবুটের দাম ৩৫০-৯শ টাকা। বড় আকারের দাম ৫৫০-২৫শ টাকা। রাবার ও স্পঞ্জের জুতা ৩শ-১হাজার টাকা। দুই ফিতা বেল্টযুক্ত স্যান্ডেল ২শ-৬শ টাকা। ফুটপাতে স্যান্ডেল মিলবে ১৫০-২৪০ টাকায়।