আল–কায়েদা পারেনি, খালেদাও পারবেন না
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সন্ত্রাস ও বোমাবাজি করে আল–কায়েদা সফল হতে পারেনি, বিএনপিরে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সোমবার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ দেওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ভোলাকে শিল্পনগরী হিসেবে গড়তে দেশের প্রধান সব শিল্প–উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি নেতাদের নিয়ে ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউন অ্যাট ভোলা’ শিরোনামে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ এ মন্তব্য করেন। ভোলা জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে আজ শনিবার এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, দাবি আদায়ের জন্য সন্ত্রাস, বোমাবাজি হরতাল–অবরোধ যদি সফল হতো, তাহলে আল–কায়েদা অনেক আগেই সফল হতো। খালেদা জিয়া আল–কায়েদার মতো হরতাল–অবরোধসহ বোমাবাজি করে দাবি আদায়ে নেমেছে। তিনি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো অকার্যকর দেশে পরিণত করতে চাচ্ছেন; এখানেও তিনি সফল হবেন না। তিনি আরও বলেন, কোমলমতি শিশুদের এসএসসি পরীক্ষার সময় ৭২ ঘণ্টা হরতাল দেওয়া কোনো বিবেকবান নেতৃত্ব হতে পারে না।
কর্মশালায় বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ভোলা ছিল একসময় ধান, সুপারি ইলিশের জেলা। এখন ভোলা হয়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ আর নিশ্চিত নিরাপদ জেলা। এ জেলা শান্তির নগরী; যেটি শিল্পায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ভোলাও এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত আধুনিক জেলায় রূপান্তরিত করতে আজ থেকে নতুন করে শিল্পায়নের বীজ রোপণ করা হলো। ভোলায় আছে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এই গ্যাস ব্যবহার করে নির্মাণ হয়েছে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র; আরও ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের কাজ শুরু হবে।
নদীভাঙন প্রতিরোধে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভোলায় সমুদ্র ও নদীবন্দর নির্মাণ করা হবে। মাত্র ৪-৫ ঘণ্টায় ভোলা থেকে নদীপথে মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো সম্ভব। পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে ভোলা-বরিশাল সড়ক নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, ভোলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজার শুভেচ্ছা বক্তব্য ও বিনিয়োগ বোর্ডের অতিরিক্ত সচিব নাভাষ চন্দ্র মণ্ডলের মূল প্রবন্ধ পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু কর্মশালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড। বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ সভাপতির বক্তব্যে বলেছেন, ‘ভোলা হবে সিঙ্গাপুরের চেয়েও উন্নত শিল্পনগরী। এখানেও আছে শিল্প কলকারখানা গড়ার সকল উপাদান।’ বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেছেন, ‘ভোলার চরফ্যাশনকে পর্যটন এলাকা গড়তে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। ভোলায় দেশি-বিদেশি পর্যটক ও শিল্পপতিদের দ্রুত চলাচলের জন্য একটি বিমানবন্দর গড়া জরুরি হয়ে পড়েছে।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ জানান স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের একটি শাখা তিনি ভোলায় স্থাপন করবেন। এই শাখা থেকে মাত্র ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে উদ্যোক্তাদের। বিজিএমইর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিদেশ থেকে যদি কাপড় আনতে পারি, তাহলে ভোলায় উৎপাদিত কাপড় কেন নিতে পারব না। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠার ব্যবস্থা করলে আমরাও এগিয়ে আসব।’
দৈনিক সমকাল–এর সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘ভোলায় যদি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠে, তবে বরিশাল বিভাগে ভারী ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে।’
নিটল-টাটা কোম্পানির চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘সরকার অনুমতি দিলে ছয় মাসের মধ্যে তার কোম্পানি ভোলায় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণের কাজ শুরু করবে।’
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজিমুদ্দিন চৌধুরী বলেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি গড়তে ভোলায় নদীভাঙন প্রতিরোধসহ পোর্ট গড়া দরকার।’
ভোলা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভোলায় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস, জমি, নদীপথ ও সড়কপথসহ সকল সুবিধা আছে। তবে যাতায়াতে আরও গতি বাড়ানোর জন্য নদী ও খাল খনন করতে হবে।’
প্রাণ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসির আহমেদ বলেন, ‘সরকার অনুমতি দিলে ভোলায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য ব্যবহার করে আমরা ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ইন্ডাস্ট্রি গড়ব। কারণ, জরিপ করে দেখেছি, ভোলা থেকে নদীপথে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব ৪-৫ ঘণ্টা।’
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. গাউস, এফবিসিসিআইর সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, মনোয়ারা হাকিম আলীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় ২০টি গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক ও প্রতিনিধিরা কর্মশালায় উপস্থিত থেকে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি গড়তে পরামর্শ ও আশ্বাস দিয়েছেন।