দেশব্যাপী ৭২ ঘণ্টার দ্বিতীয় দিনের হরতাল চলছে
আজমী আনোয়ার, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ দেশব্যাপী টানা অবরোধের মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ফের ৭২ ঘন্টার দ্বিতীয় দিনের হরতাল চলছে। রোববার ভোর ছয়টা থেকে এ হরতাল শুরু হয়েছে। শেষ হবে বুধবার ভোর ছয়টায়।
সোমবার সকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হরতালের সমর্থনে বিক্ষিপ্ত মিছিল-পিকেটিং, অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে তেমন কোন সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
শনিবার ২০ দলের পক্ষে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে হরতালের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিটি কর্মদিবসে হরতাল পালন করা হয়।
হরতাল-অবরোধকে ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যৌথ টহল টিম নামানো হয়েছে। দেশের অন্যান্য নগর মহানগর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। হরতাল-অবরোধের সমর্থনে মিছিল-পিকেটিং ঠেকাতে সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।
এছাড়া অবরোধ-হরতালে যেকোন সহিংসতা মোকাবেলায় পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি সারা দেশে বেশ কয়েক আড়াই শতাধিক প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সকালে হরতালে রাজধানীতে সীমিত সংখ্যক গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে প্রশাসনের সাথে বৈঠকে ঢাকা পরিবহণ মালিক সমিতির গাড়ি চালানোর আগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানবাহন চলাচল কিছুটা বাড়লেও পরিবহনলোতে যাত্রী সংখ্যা খুবই কম দেখা যায়। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলও কম দেখা গেছে।
ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রী কম থাকায় নির্ধারিত সময়ের পর সেগুলো ছাড়ছে। তবে গাবতলি, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। একইভাবে দূরপাল্লার কোন যান ঢাকায় প্রবেশ করেনি।
এদিকে দেশের বিভিন্ন নগর-মহানগরসহ জেলায়ও চলছে শান্তিপূর্ণ হরতাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক প্রহরার মধ্যেও হরতাল-অবরোধের সমর্থনে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত মিছিল-পিকেটিং করছে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ, রাস্তায় ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঘটেছে ককটেল বিস্ফোরণ। অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জেলা সদর, নগর-মহানগরগুলোর আন্তঃমহাসড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরায় কিছু হালকা যানবাহন চলাচল করার খবর পাওয়া গেছে।
হরতালের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম দেখা যায়।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দেশব্যাপী ক্রসফায়ারের মাধ্যমে নেতাকর্মীকে হত্যা, গুলি করে আহত, গণগ্রেফতার, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, খালেদা জিয়াকে অভুক্ত রেখে হত্যার ষড়যন্ত্র, বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ও কুক্ষিগতকরণ, সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি এই হরতাল ডাকা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহ্বান জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ।