পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে শনিবার তথ্য-প্রযুক্তি আন্দোলনের মানববন্ধন
সাইফ মাহমুদ, প্রযুক্তি রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ইন্টারনেটের কস্ট মডিউল নির্ধারণের ক্ষেত্রে আইএসপিগুলো প্রতারণার চেষ্টা করলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার আহ্বানই ছিল তথ্য-প্রযুক্তি আন্দোলনের মুল উদ্দেশ্য। বহুদিন ধরে সাধারন জনগনের অন্তরালে লুকায়িত ক্ষোভ যেন প্রকাশ পাচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি এর নির্বাচিত কিছু পয়েন্ট হচ্ছেঃ
ক. আইএসপিগুলো স্বেচ্ছাচারী ও প্রতারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
খ. প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নয়।
গ. বিটিআরসি কাদের স্বার্থে নিস্ক্রীয় থাকছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।
ঘ. ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অনুসঙ্গ ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়া প্রয়োজন।
ঙ. প্রতিটি গ্রামে স্বল্পমূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট দিতে হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নিস্ক্রীয়তার সুযোগে আইএসপিগুলোর (ইন্টরনেট সার্ভিস প্রোভাইডারঃ ব্রডব্যান্ড, ওয়াইম্যক্স, টেলিকম) স্বেচ্ছাচারীতা ও প্রতারণার প্রতিবাদে ২২ জুন ২০১৩ খৃস্টাব্দ শনিবার সকাল ১১টায় পুলিশের বাধার মুখে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করেছে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন।
সামাজিক জীবনধারা ও তথ্যমূলক বিনোদন বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল ডিয়ারজুলীয়াস.কম -এর কর্পোরেট সোস্যাল রেস্পন্সিবিলিটির উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল্যহার বিটিআরসি কর্তৃক প্রতি মেগাবাইট ১০ পয়সা এবং প্রতি গিগাবাইট ১০ টাকা হারে এবং সর্বনিন্ম গতি ৫১২ কিলোবাইট অবিলম্বে ঘোষণা ও বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠন তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
আন্দোলনকারীরা সকাল সাড়ে ৮টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন শুরু হলে ৮ মিনিট পর পুলিশ এসে বাধা দেয়। এর কিছুক্ষণ পর জাতীয় প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করে।
মানববন্ধন চলাকালে ডিয়ারজুলীয়াস.কমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুলীয়াস চৌধুরী পুলিশের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ ও অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আইএসপিগুলো স্বেচ্ছাচারী ও প্রতারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আইএসপিগুলো গ্রাহকদের ঠকানোর জন্য অসংখ্য প্যাকেজ বাজারে ছেড়েছে। তারা সময়মত ও সঠিকভাবে গ্রাহক সেবা দেয় না। আইএসপিগুলোর কল সেন্টারে সেবার জন্য ফোন করা হলে সহজে হিউম্যান রেসপন্স করে না। ১ ঘন্টা পর্যন্ত মিউজিক শুনিয়ে এবং অপেক্ষা করতে বলে চার্জ কেটে নেয়। ইন্টারনেট সার্ভার ডাউন থাকলেও গ্রাহকদের জানার সুযোগ দেয় না। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটকের কলসেন্টারে বেশিরভাগ সময়ই ফোন ধরে না। গ্রাহকের ক্রয়কৃত ইন্টারনেট ডাটা শেষ হয়ে গেলে আইএসপিগুলো জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়া পি১ প্যাকেজের আওতায় প্রতি গিগাবাইট ২১ হাজার টাকা হিসেবে একাউন্টে থাকা সমুদয় টাকা কেটে নেয়। জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়া সময়সীমার অজুহাতে আইএসপিগুলো গ্রাহকদের অব্যবহৃত ডাটা বা এর মূল্য আত্মসাত করে। বাংলালায়ন, কিউবি, ওলোসহ ওয়াইম্যাক্স কোম্পানী; ব্রডব্যান্ড ও টেলিকম আইএসপিগুলোর ৪/৫ দিন পর্যন্ত সার্ভিস বন্ধ থাকলেও মাসিক প্যাকেজ হিসেবে ব্যবহারকারী গ্রাহকদের ওই সময়ের ডাটা বা তার মূল্য আত্মসাত করে। বাংলালায়ন চলতি মাসের ১৪ এবং ১৯ তারিখ টানা চব্বিশ ঘন্টা করে তাদের সার্ভিস বন্ধ করে রেখে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে। ওই সময় বাংলালায়ন তাদের কাষ্টমার কেয়ারের নাম্বার ০১১৯৮৯৮৯৮৯৮ নাম্বারটিও অকেজো করে রাখে। তিনি বলেন, বিটিআরসি এসব জেনেও কাদের স্বার্থে নিস্ক্রীয় থাকছে তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।
জুলীয়াস চৌধুরী বলেন, চারদিকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সরকার কিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবে তা আজ দেশবাসী জানতে চায়।
জুলীয়াস চৌধুরী আরো বলেন, স্বেচ্ছাচারীতা ও প্রতারণা ঠেকাতে আইএসপিগুলোকে গ্রাহক পর্যায়ে দুটি মাত্র সরল প্যাকেজ বিক্রির অনুমতি দেয়া যাবে। একটি ১ মেগাবাইট স্লাবে অন্যটি ১ গিগাবাইট স্লাবে। আইএসপিগুলো তাদের ব্যবসার প্রসার ও প্রতিযোগিতা করবে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, সর্বার্ধিক গতি, নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ, সহজ ব্যবহার ও উন্নত গ্রাহক সেবার মাধ্যমে।
গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্যহার ঘোষণার ক্ষেত্রে বিটিআরসি ও আইএসপিগুলোর অন্যতম অজুহাত কস্ট মডিউল নির্ধারণ। জুলীয়াস চৌধুরী বলেন, মোবাইল টেলিফোনের কলচার্জ নির্ধারণের সময় টেলিকম অপারেটরগুলো নিজেরা কস্ট মডিউল নির্ধারণ করে বিটিআরসিকে জানিয়েছিল কল/মিনিট প্রতি তাদের খরচ হয় ৪ টাকা ৬০ পয়সা। অংকটি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় বিটিআরসির তৎকালীন কমিশন উপদেষ্টা নিয়োগ করে জানতে পারে আসলে অপারেটরগুলোর কল/মিনিট প্রতি তাদের খরচ হয় মাত্র ৩২ পয়সা। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, টেলিকম অপারেটরগুলো ভয়ংকর রকমের প্রতারক। সেই প্রতারক টেলিকম অপারেটরগুলোই আবার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রেভাইডার । জুলীয়াস চৌধুরী হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ইন্টারনেটের কস্ট মডিউল নির্ধারণের ক্ষেত্রে আইএসপিগুলো প্রতারণার চেষ্টা করলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
আরো বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ টেলিকম সাবস্ক্রাইবার্স ফোরাম ও বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শার্দুল আহমেদ সেনা, ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও আইসিটি অব বাংলাদেশ- ইয়াহু গ্রুপের মডারেটর এম.এ. কবির, সাংবাদিক মো. কামরুজ্জামান, মো. আরব আলী বিশ্বাস, কাজী মো. নাসিরুল হক প্রমুখ।
মানববন্ধনে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মেহেদী হাসান তাফসীর, ইউল্যাবিয়ান ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট রায়হান বিজন, সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী বায়েজিদ ইবনে হক, সেলিম মোড়ল, জাহিদ হাসান মিন্টু, শেখ মোহাম্মদ জুয়েল, শাকিল আহমেদসহ বিপুল সংখ্যক ইন্টারনেট গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন।
জুলীয়াস চৌধুরী জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অনুসঙ্গ ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়া প্রয়োজন। এতে সবচেয়ে বড় বাধা ফ্রিকোয়েন্সি বা স্পেক্টামের উচ্চমূল্য। ১বছরের মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে গ্রামাঞ্চলে ৬০ শতাংশ কভারেজের জন্য নেটওয়ার্ক স্থাপনের শর্তসাপেক্ষে সকল অপারেটরকে আগামী ৫ বছরের জন্য বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে থ্রিজি লাইসেন্স প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হবে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর থ্রিজির নিলাম হওয়ার কথা রয়েছে।
মানববন্ধন থেকে জুলীয়াস চৌধুরী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
দেশ ও জনগণের কল্যাণে বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার প্রয়াসে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের কমিটি গঠন করার আহ্বান জানানো হয়। কমিটি গঠন করতে আগ্রহীদের ০১৭১৩১০৯১৩০ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মানববন্ধনঃ প্রতিটি গ্রামে স্বল্পমূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট দেয়ার দাবিতে দেশজুড়ে সকল জেলা ও উপজেলা সদরে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের স্থানীয় কমিটিরগুলো ২৪ জুন থেকে ৮ জুলাই ২০১৩ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত মানববন্ধন করবে।
প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অনুসঙ্গ ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়া প্রয়োজন। এতে সবচেয়ে বড় বাধা ফ্রিকোয়েন্সি বা স্পেক্টামের উচ্চমূল্য। ১বছরের মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে গ্রামাঞ্চলে ৬০ শতাংশ কভারেজের জন্য নেটওয়ার্ক স্থাপনের শর্তসাপেক্ষে সকল অপারেটরকে আগামী ৫ বছরের জন্য বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে থ্রিজি লাইসেন্স প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে সকল জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের স্থানীয় কমিটির পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান ১ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই ২০১৩ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত।
গোলটেবিল বৈঠকঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অনুষঙ্গ এবং ইন্টারনেট-বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতির একমাত্র ব্র্যান্ড .বিডি ডোমেইন শুরু থেকেই চরম অবহলার শিকার। নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানী লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের না বুঝার কারণে বা সদিচ্ছার অভাবে .বিডি ডোমেইন কুক্ষিগত হয়ে আছে। এর আশু মুক্তির জন্য সরকারকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দেয়ার প্রয়াসে *.bd ডোমেইন : আশু করণীয়’ শীর্ষক রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠক করবে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন।
এছাড়া ‘ফ্রিল্যান্সিং শিল্পের বিকাশে সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক পৃথকগোলটেবিল বৈঠক করবে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোল ন।
এই আন্দোলন কোন সরকারবিরোধী বা ভাংচুর আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ, তবে পুলিশ কেন তথ্যপ্রযুক্তি এর এই আন্দোলনে বাঁধা প্রদান করছে এ ব্যাপারে পুলিশ কিছু জানায় নি। যে আন্দোলন দেশকে এগিয়ে নেয়ার সে আন্দোলনে পুলিশের এই বাঁধা নিতান্তই বেমানান। যেখানে পুলিশের উচিত দেশের,দশের ও জনগনের স্বার্থে সাহায্য করা সেখানে তারা আজ দেশের ও জনগনের বিরধাচরন করছে। তথ্য প্রযুক্তি আন্দোলন ও সাধারন জনগণ আশা করে পরবর্তী আন্দোলনে পুলিশ তাদের সহায়তা করবে।