ডিসিসি নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে ইসিকে চিঠি
আজমী আনোয়ার, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আজ সোমবার সন্ধ্যায় ই-মেইল যোগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে নির্বাচন অনুষ্ঠানের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে-এই চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি জানানোর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করল সরকার।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সরোজ কুমার নাথের নামে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৯ নং সংরক্ষিত আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এ অবস্থায় ওয়ার্ডগুলোর সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতা নিষ্পত্তি প্রেক্ষিতে ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গত ২৮ জানুয়ারি সীমানা নির্ধারণের গেজেটটি তৈরি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এটি বিজি প্রেসের ওয়েবসাইটেও এতদিন ছিল। প্রায় ২৫দিন পর এ সম্পর্কে ইসিকে জানানো হলো। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের লাগাতার অবরোধ-হরতালের আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিকে এগোতে সরকারের নির্দেশনা এসেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অশোক মাধব রায় চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিকে জুনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিকল্পনাও রয়েছে ইসির। এর আগে ডিসিসি করতে না পারলে তা বিলম্ব হতে পারে আবারও।
বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা বলে আসছেন, এতদিন না দিলেও এখন আন্দোলন থেকে জনগণের চোখ ফেরাতেই ডিসিসি নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার। মন্ত্রিসভার গত সপ্তাহের বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হককে ডিসিসি উত্তরে এবং সাবেক মেয়র মো. হানিফের ছেলে সাঈদ খোকনকে ডিসিসি দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠি পেয়েছেন। মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধসহ দুটি সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট সীমানা গেজেট মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। কমিশন এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরার্মশ করে নির্বাচন কমিশন টাকা চেয়ে চিঠি দেয় । সূত্র মতে, গত ২৫ জানুয়ারি কমিশন সচিবালয় থেকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন পরিচালনার জন্য আরও ৪৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। সরকারের চলতি বাজেটে এই নির্বাচনের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা আছে।
এদিকে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে অবহিত করে বিস্তারিত একটি নোট দেন। সূত্রমতে মন্ত্রিসভা কক্ষেই নির্বাচন করার বিষয়ে অনুমোদন দেন। প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন। এর আগে গত কয়েকটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত ডিসিসি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে তাগিদ দেন। এরপরই স্থানীয় সরকার বিভাগ দ্রুত সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি করে গেজেট প্রকাশ করে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, মার্চের শেষে অথবা এপ্রিলের প্রথমে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায় সরকার। কেননা এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। তা ছাড়াও চলমান এসএসসি পরীক্ষাও মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এসএসসি ও এইচএসসির মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচন করা যেতে পারে।
তবে অপর এক কর্মকর্তা জানান, রমজানের আগে বিশেষ করে মধ্য জুন নাগাদ মধ্যে এই নির্বাচন করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে এপ্রিলের শুরুতেই তফসিল ঘোষণা করে মে মাসের শেষভাগে অথবা জুনের প্রথমে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন হতে পারে।
২০১২ সালের ২৪ মে দুই সিটিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও আদালতের নির্দেশে আটকে যায় নির্বাচন। ২০১৩ সালের ১৩ মে আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলেও সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কথা বলে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে অপারগতা প্রকাশ করে। ইসি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চিঠিও দেয়।
১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটে নির্বাচন হয়েছে চারবার। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হয়েছে মাত্র দুবার। এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে প্রথম নির্বাচনের পর দ্বিতীয় নির্বাচন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন হয় আরও তিন বছর পর ২০০২ সালে। তখন ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ১৩ বছর পর আবার ঢাকায় দুই সিটির নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
ডিসিসি নির্বাচন বিষয়ে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী অনেক দিন ধরে ঢাকা সিটি নির্বাচনের বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে অনুমতি দিয়ে নির্বাচনের বিষয়টি আরও এগিয়ে আনলেন। জানা গেছে, বৈঠকে ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হককে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার মতামত পুনরায় জানান। তবে, ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থীর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চট্টগ্রাম ও ঢাকা দক্ষিণে মেয়র প্রার্থীর নাম পরে জানানো হবে।