গ্রেপ্তার নারীর তথ্যে লাশ মিলল নিখোঁজ পৌর মেয়রের
আব্দুল মান্নান, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, রাজশাহীঃ প্রায় দুই মাস ধরে নিখোঁজ থাকা রাজশাহীর পবার নওহাটা পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল গফুর সরকারের লাশ রাজধানীর আজিমপুরের কবরস্থান থেকে আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা হয়েছে। মেয়র নিখোঁজের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া এক নারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং তাঁর দেখিয়ে দেওয়া কবর থেকে পুলিশ লাশটি তোলে।
পুলিশ বলেছে, আবদুল গফুরের নিখোঁজ ও মৃত্যুর বিষয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ওই নারী পুলিশকে বিস্তারিত তথ্য দিলেও তদন্তের স্বার্থে তারা এখনই কিছু প্রকাশ করবে না।
রাজশাহীর পবা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি জানান, গত ১ জানুয়ারি মেয়র আবদুল গফুর সরকার ঢাকা যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। ঢাকায় পৌঁছানোর পর তিনি তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথাও বলেন। গত ১৬ জানুয়ারি তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তাঁর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। গত ১৯ জানুয়ারি মেয়রের ফোন নম্বর থেকে একটি এসএমএস যায়, তাতে ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। এতে পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হয়। ওই দিন বিকেলে মেয়রের স্ত্রী ফজিলাতুন নেসা পবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে জিডিটি অপহরণ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, এ মামলায় কথিত চিকিৎসক জান্নাতুন সালমা ওরফে মিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি নওগাঁর সালমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক। তাঁকে প্রথমে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। প্রথম দফার রিমান্ড শেষ হলে গতকাল পুলিশ দ্বিতীয় দফায় তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আজ সালমাকে নিয়ে ঢাকায় আজিমপুর গোরস্থানে যায়। সঙ্গে ছিলেন রাজশাহীর পবা-মোহনপুর আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন।
সাংসদ আয়েন উদ্দিন জানান, কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক সোহেল কথিত চিকিৎসক জান্নাতুন সালমা ওরফে মিমকে শনাক্ত করেন। সোহেল পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, এই নারী কবরের ওপরে ঘাস লাগানোর টাকাও বাকি রেখে চলে গেছেন। পরে আর ফোন ধরেননি। তত্ত্বাবধায়ক সালমাকে চিনতে পেরেছেন এবং তাঁর ফোন নম্বরও শনাক্ত করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের সময় যে নামফলক দেওয়া রয়েছে, তাতে মেয়রের নাম ঠিকমতোই লেখা আছে। নামফলকে মৃত্যুর তারিখ দেওয়া হয়েছে ৩ জানুয়ারি ২০১৫। তবে কবরস্থানের রেজিস্টারে মৃত্যুর তারিখ লেখা রয়েছে ৮ জানুয়ারি ২০১৫।
সাংসদ আয়েন উদ্দিন আরও জানান, এই দলের সঙ্গে ঢাকা মহানগরের ম্যাজিস্ট্রেট রেহানুল হক ছিলেন। সবার উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ উঠিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। রাজশাহীর পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমানও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
নিখোঁজ মেয়রকে জীবিত উদ্ধারের দাবিতে এলাকাবাসী গত ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।