খালেদার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল, পরবর্তী শুনানি ৫ এপ্রিল
আজমী আনোয়ার, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ আদেশ দেন।
এ দুই মামলায় আজকের শুনানি শেষে আদালত পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের আগামী ৫ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেছেন। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে মামলা দুটির শুনানি শুরু হয়। শেষ হয় বেলা দেড়টায়।
এর পরই দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জানান, খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল আছে। তবে খালেদা জিয়া আজই আত্মসমর্পণ করতে পারেন বলে তাঁদের কাছে খবর আছে। তাই বিশেষ জজ আদালত-৩-এর অস্থায়ী এজলাস বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন। খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ না করায় বিকেল পাঁচটার পর বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারকসহ বিচারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চলে যান।
বিকেলে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ওপর মহলের একটা নির্দেশ ছিল যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন। সে জন্যই ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৩-এর এজলাস বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেছেন।
আদালতের বিচারকাজ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মোশাররফ হোসেন কাজল জানান, খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল আছে। তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা পুনরায় তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে জামিন দেওয়া হোক অথবা তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দেওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী যে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, হয় তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হবে, না হয় তাঁকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে হবে। এ দুটোর কোনোটাই যেহেতু এখনো হয়নি, তাই এ অবস্থায় এ ধরনের আবেদন করার সুযোগ নেই। সুতরাং আইনি কোনো ভিত্তি না থাকায় আদালত তাঁদের সব আবেদন নথিভুক্ত করেছেন, গ্রহণ করেননি।
কাজল জানান, পলাতক আসামি উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত হয়ে কথা বলতে পারেন না। তার পরও খালেদা জিয়া ও অন্য আসামিদের আইনজীবীদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের এই আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, থাকবে ও কার্যকর হবে। হয় তাঁকে আদালতে আসতে হবে, অন্যথায় তাঁকে কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসবে। তিনি যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন, আবার যেকোনো সময় আত্মসমর্পণ করতে পারেন। সব সুযোগ রাখা হয়েছে।
এদিকে বিশেষ আদালতে শুনানি শেষে বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিলসহ আমরা তিনটি আবেদন করেছিলাম। আদালত তা “নথিজাত” করেছেন। শুনানির পরবর্তী তারিখ ৫ এপ্রিল নির্ধারণ করেছেন আদালত।’ তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া নিরাপত্তা পেলে আদালতে আসবেন। বিচারের রায় নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। আজ তাঁর আদালতে না আসার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে।’ এর মধ্যে নিরাপত্তার কারণই প্রধান বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের অপর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আদালত যেহেতু ৫ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন, এ সময় পর্যন্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা “স্থিতি” অবস্থায় থাকবে।’
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করার জন্য হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করা হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ আবেদনের শুনানি হবে। এ ব্যাপারে সানাউল্লাহ মিয়া মনে করেন, এ কারণেই আজ বিশেষ আদালত কৌশলী হয়ে আদেশ দিয়েছেন।