ইমরুল, নাকি বাড়তি স্পিনার?
মনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচটা হয়েছিল অ্যাডিলেডে। এরপর আর কোনো ম্যাচ হয়নি। কাল বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের ‘প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল’ দিয়ে বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার মতো ম্যাচ গড়াবে এ মাঠে। মাত্র একটি ম্যাচের বিচারে এ মাঠের চরিত্র বিশ্লেষণ করা একটু কঠিনই। এতে আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশ ইমরুল কায়েসসহ আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলবে, নাকি একজন ব্যাটসম্যান কমিয়ে যোগ হবে একজন বাড়তি বিশেষজ্ঞ স্পিনার?
অ্যাডিলেডে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে সফল ছিলেন পেসাররাই। পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সোহেল খান আর ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট মোহাম্মদ শামির। তা ছাড়া পুরোনো রেকর্ডও বলছে অ্যাডিলেডে সাধারণতই পেসাররাই সফল। উইকেট সংগ্রহে শীর্ষ ৫ বোলারের মধ্যে চারজনই পেসার। এ মাঠে সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট নিয়েছেন ব্রেট লি। শীর্ষ পাঁচে একমাত্র স্পিনার শেন ওয়ার্ন। অস্ট্রেলীয় স্পিন কিংবদন্তি এ মাঠে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। এক ইনিংসে সফল সেরা পাঁচ বোলারদের মধ্যে নেই কোনো স্পিনার।
এবারের বিশ্বকাপ যেন বোলারদের ‘সৎমা’! বিশেষজ্ঞ বোলারই হোক কিংবা খণ্ডকালীন, ওভারপ্রতি ৬-৭ করে রান দেওয়াটাই যেন নিয়তি। অ্যাডিলেডের অতীত আর বিশ্বকাপের এই ‘বর্তমান’, দুই মিলিয়ে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের উৎসাহিত করতে পারে আগের দুই ম্যাচের মতো আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা। কারণ, বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়েও যদি ওভারে সাতের বেশি করে রান দিতেই হয়, তাহলে আর বাড়তি বোলার নিয়ে লাভ কী? তারচেয়ে একজন ব্যাটসম্যান বেশি নিয়ে খেলাই ভালো। একজন কম বিশেষজ্ঞ বোলারের ঘাটতি না হয় কজন খণ্ডকালীন বোলার পুষিয়ে দিলেন। এ যুক্তি বলছে বাংলাদেশ কাল বাড়তি স্পিনার না নিয়ে ইমরুলকে নিয়েই খেলুক। আবার ইমরুল অস্ট্রেলিয়া গেলেনই গতকাল। খুব বেশি সময় অনুশীলনের সুযোগও পাননি। তা ছাড়া স্পিনের বিপক্ষে ইংলিশদের চিরায়ত দুর্বলতা তো আছেই। এ যুক্তি বলছে ইমরুলের বদলে একজন বাড়তি স্পিনার নিয়েই খেলা উচিত, যেটি হতে পারেন আরাফাত সানি। দুটো যুক্তিই এতটাই শক্তশালী, ইমরুল নাকি বাড়তি স্পিনার সহজ কোনো উত্তর মিলছে না। এমনও হতে পারে কাল উইকেট ও কন্ডিশন দেখে শেষ মুহূর্তে নেওয়া হবে সিদ্ধান্ত।
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা খোলাসা করতে চাইলেন না, ‘হ্যাঁ, আগের ম্যাচের মতো এবারও একই সুযোগ আছে (আরেকজন বাড়তি বিশেষজ্ঞ স্পিনার খেলানো)। আসলে কন্ডিশন, ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস ও দলের সমন্বয়—সব একসঙ্গে বিবেচনা করেই একাদশ নির্বাচন করব। মাঠে একজন বাড়তি স্পিনারের প্রয়োজনীয়তা আমিও অনুভব করেছি। তবে কখনো কখনো কন্ডিশনের সঙ্গে এটা যায় না কিংবা দলের সমন্বয় এটি সমর্থন করে না। চেষ্টা করব সেরা একাদশ তৈরি করতে, যাতে ইংল্যান্ডের জন্য ব্যাপারটা সহজ না হয়।’
তবে দলের একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলল মাশরাফির কথায়, ‘গত সংবাদ সম্মেলনেই বলেছি, এই কন্ডিশনে বিজয়ী একাদশ অপরিবর্তিত রেখে খেলা আমাদের জন্য যুক্তিযুক্ত নয়। এই উইকেটে দলের ভারসাম্য বজায় রাখাও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের এমন দল গঠন করতে হবে যাতে প্রতিপক্ষের জন্য ম্যাচটা কঠিন হয়ে যায়।’ আবার পরক্ষণে ইমরুলের খেলার কথাও উড়িয়ে দিলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘ইমরুল গতকাল এসেছে। তবে সে অনুশীলন করেছে। অবশ্যই সে খেলার অবস্থায় আছে। চোটের কারণে এমনিতে আমাদের একজন ওপেনার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আশা করি, সুযোগ পেলে সে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই খেলতে পারবে। এটা তার জন্য ভালো সুযোগ। সে বিশ্বকাপে ছিল না এমনকি ভাবতেও পারেনি হঠাৎ এমন সুযোগ মিলবে। এখন তার একটা সুযোগ এসেছে দারুণ কিছু করে দেখানোর।’
কন্ডিশনটা কিছুটা অজানা বলেই কিনা মাশরাফির মতো হাবিবুল বাশারও পরিষ্কার এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাইলেন না। বিকেলে সাবেক এ অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক বললেন, ‘দলের একাদশ নির্ভর করে প্রতিপক্ষ ও কন্ডিশনের ওপর। প্রতিপক্ষকে জানি কিন্তু কন্ডিশনের ব্যাপারে পরিষ্কার নয়। সেখানে থাকা টিম ম্যানেজমেন্টই বলতে পারবে একজন ব্যাটসম্যান নাকি বাড়তি স্পিনার নিয়ে খেলবে। সাকিব-মুশফিক থাকায় সব সময় আমাদের একটি সুবিধা, একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান বা বোলার নিয়ে আমরা খেলতে পারি। দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া দলেও কিন্তু এমন সুবিধা নেই। ব্যাটসম্যান নাকি বাড়তি স্পিনার—দুটো সুযোগই খোলা আছে আমাদের সামনে। পরিস্থিতির বিচারে টিম ম্যানেজমেন্ট যে কোনো একটিকেই বেছে নেবে।’