অব্যবহৃত সিমের মালিকানা হারাবেন গ্রাহক
আব্দুল মান্নান, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মোবাইল সংযোগ একনাগাড়ে দুই বছর ব্যবহার না করলে সিমের মালিকানা হারাবেন মোবাইল ফোন গ্রাহক। এরপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ওই নম্বরটি বিক্রি করে দিতে পারবে। এ ছাড়া অব্যবহৃত ইন্টারনেট ডেটা পরের মাসে কেনা প্যাকেজের সঙ্গে ব্যবহারের সুযোগ পাবেন গ্রাহকেরা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে এ নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনায় তিনটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মোবাইল কোম্পানিগুলো বলছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং দেশের মোবাইল খাতের জন্য এ সিদ্ধান্তকে তারা ইতিবাচকভাবেই দেখছে।
বিটিআরসির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী (জানুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত), দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহকসংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার। আর ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার।
গত বৃহস্পতিবার বিটিআরসির জারি করা ‘ডাইরেকটিভস অন সার্ভিস অ্যান্ড ট্যারিফ ২০১৫’ শীর্ষক এই নির্দেশনায় মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন সেবা, অফার, নম্বর প্ল্যান, ব্যবহার নোটিফিকেশন, ট্যারিফ ও চার্জ, প্রচারমূলক কার্যক্রম (প্রমোশনাল অ্যাক্টিভিটিজ), মার্কেট কমিউনিকেশন ইত্যাদি বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া মোবাইল সংযোগ অকার্যকর (ডি-অ্যাকটিভ), পুনরায় সচল (রি-অ্যাকটিভ), পুনরায় বিক্রির (রি-সেলিং) বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয় ওই নির্দেশনায়।
নির্দেশনায় বলা হয়, একনাগাড়ে কোনো মোবাইল সংযোগ ৯০ দিন বন্ধ থাকলে তা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। এক বছরের মধ্যে ন্যূনতম রিচার্জের মাধ্যমে সেটা চালু করতে পারবেন গ্রাহক। সিমটি যদি ৩৬৫ দিনের বেশি অব্যবহৃত থাকে তবে এটি সচল করতে গ্রাহককে ১৫০ টাকা রিচার্জ করতে হবে। গ্রাহক যদি এক বছরের মধ্যে বন্ধ সংযোগ চালু না করেন, তাহলে ৭৩০ দিনের (দুই বছর) মধ্যে অনধিক ১০০ টাকা ফি দিয়ে তা সচল করতে পারবেন। সংযোগ একনাগাড়ে দুই বছর বন্ধ থাকলেও মোবাইল কোম্পানিগুলো সেটা বিক্রি করতে পারবে না। দুই বছর পর্যন্ত ওই নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে।
এ সময়ের পর বিটিআরসি বা অন্য কোনো সংস্থার আপত্তি না থাকলে মোবাইল কোম্পানি ওই নম্বর বিক্রি করতে পারবে। বিক্রি করার ক্ষেত্রেও শর্ত জুড়ে দিয়েছে বিটিআরসি। বিক্রি করার আগে এসব নম্বর কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইট, কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ও বিটিআরসির ওয়েবসাইটে দিতে হবে। যেসব নম্বর আবার বিক্রি হবে, বিক্রির তিন মাস আগে কমপক্ষে তিনটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানাতে হবে।
পুনরায় বিক্রি করা সংযোগ চলতি বাজারদরে বিক্রি করতে হবে বলেও নির্দেশনায় বলা হয়েছে। নম্বর বিক্রি করে দেওয়ার পরও ওই গ্রাহকের নিবন্ধন, ব্যবহার ও অন্যান্য তথ্য কোম্পানিগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে।
অব্যবহৃত ইন্টারনেট ডেটাও গ্রাহকদের ফেরত দিতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এ ক্ষেত্রে পরের মাসে কেনা ডেটা প্যাকেজের সঙ্গে আগের মাসের অব্যবহৃত ডেটা যুক্ত হবে। অব্যবহৃত ডেটার ব্যবহার শেষ হলেই নতুন ডেটা ব্যবহারের সুযোগ দিতে কোম্পানিগুলোকে বলা হয়েছে।
ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সময়-সময় নোটিফিকেশন পাঠানোর কথাও নির্দেশনায় গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ১০০ মেগাবাইটের (এমবি) নিচে ডেটার ক্ষেত্রে একবার, ১০০ থেকে ৫০০ এমবির ক্ষেত্রে দুবার এবং ৫০০ এমবির বেশি প্যাকেজের ডেটার ক্ষেত্রে গ্রাহককে তিনবার নোটিফিকেশন পাঠাতে বলা হয়েছে। বেশি ডেটার ক্ষেত্রে মোট ডেটার ৫০ ভাগ শেষ হলে প্রথমবার এবং ৮০ ভাগ ডেটা শেষ হলে গ্রাহককে দ্বিতীয়বার নোটিফিকেশন পাঠাতে বলা হয়েছে। ডেটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নোটিফিকেশন দিতে হবে এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার অব্যাহত রাখলে কীভাবে চার্জ ধরা হবে, তা-ও জানাতে হবে।
মোবাইল রিচার্জের ক্ষেত্রেও কত টাকায় কত দিন মেয়াদ দিতে হবে, তার ন্যূনতম সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১০ থেকে ৩০ টাকা রিচার্জে ১০ দিন, ৩১ থেকে ৫০ টাকায় ১৫ দিন, ৫১ থেকে ১৫০ টাকায় ৩০ দিন, ১৫১ থেকে ৩০০ টাকায় ৪৫ দিন, ৩০১ থেকে ৫০০ টাকায় ১০০ দিন, ৫০১ থেকে ৯৯৯ টাকায় ১৮০ দিন এবং ১০০০ বা তার বেশি টাকা রিচার্জে ন্যূনতম এক বছর মেয়াদ দিতে হবে।
নির্দেশনাটিতে চটকদার বিজ্ঞাপনের লাগাম টেনে ধরার উদ্যোগের কথাও বলা হয়েছে। এখন থেকে নিজেদের অফারকে কোনো কোম্পানিই আর ‘সেরা’ দাবি করে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না।
বাংলাদেশে মোবাইল কোম্পানিগুলোর সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন, অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিটিআরসির সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছে অ্যামটব। নির্দেশনা জারির আগে তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার পর অনেকগুলো পরামর্শ বিটিআরসি গ্রহণ করেছে বলেও তিনি জানান।
গ্রামীণফোনের বহির্যোগাযোগ বিভাগের প্রধান সৈয়দ তালাত কামাল আজ রোববার বলেন, নির্দেশনাটিকে গ্রামীণফোন ইতিবাচকভাবেই দেখছে। বাংলালিংকের সরকারি সম্পর্ক ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স-বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক তাইমুর রাহমানও একই মত জানান। মোবাইল কোম্পানি রবির মুখপাত্র মহিউদ্দিন বাবরও এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেওয়া এ নির্দেশনা টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য ইতিবাচক। তবে এটাকে আরও বাস্তবধর্মী করা গেলে আরও ভালো হতো বলে তিনি মন্তব্য করেন।