নির্যাতিত সাংবাদিক মিজানের জামিন নামঞ্জুর
মনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, পটুয়াখালীঃ উঠে দাঁড়ানোর সামর্থ্য নেই। আর হাঁটা তো পরের কথা। চোখে-মুখে তীব্র যন্ত্রণার ছাপ। পুলিশের নির্মম নির্যাতনে এমন পরিণতির শিকার হওয়া প্রথম আলোর বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমানকে দুই পাশ থেকে ধরে আদালতে নিতে হয়েছে পুলিশকেই। আদালতে আজ রোববার তাঁর জামিন আবেদনের ওপর শুনানি ছিল। শুনানি শেষে বিচারক সেই আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।
পুলিশকে মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ১৭ মার্চ রাতে মিজানকে গ্রেপ্তার করে বাউফল থানার পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে থানায় নিয়ে রাতভর নির্যাতন করা হয়। এরপর তাঁকে পাঠানো হয় কারাগারে।
আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মিজানকে আদালতে নেওয়া হয়। প্রথম তাঁকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এ সময় তাঁর সঙ্গে কাউকে কথা বলা বা দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটুয়াখালীর দ্বিতীয় বিচারিক হাকিম ফাইজুর রহমান এজলাসে ওঠেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হাজতখানা থেকে মিজানকে আদালতকক্ষে নেওয়া হয়। এ সময় তিনি দাঁড়াতে ও হাঁটতে পারছিলেন না। পরে পুলিশের দুই সদস্য তাঁকে দুই পাশ থেকে ধরে আদালতকক্ষে নিয়ে আসেন। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেল সুপারকে নির্দেশ দেন আদালত। পুলিশ জানায়, মিজান স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে পারছেন না।
এদিকে মিজানের ওপর নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর সাংবাদিকেরা। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে করা সাজানো মামলা প্রত্যাহার ও ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে। আজ সকালে পটুয়াখালী প্রেসক্লাব আয়োজিত এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশথেকে এসব দাবি জানানো হয়।
পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে বরিশাল প্রেসক্লাবের সাংবাদিকেরা ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার কয়েক শ সাংবাদিক অংশ নেন। জেলার মুক্তিযোদ্ধা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
কর্মসূচিতে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জি বলেন, মিজানুর রহমানের সঙ্গে পুলিশ যা করেছে, তা ন্যক্কারজনক। তাঁর ওপর চালানো নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সাজানো মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানান তিনি। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেওয়া অন্য বক্তারাও একই দাবি জানান।