ঢাকার প্রার্থীদের নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন
মনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি। দলের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে থাকলেও মাঠে থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে দলে উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
সূত্র জানায়, প্রার্থীদের এবং তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের অবাধে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির দাবি নিয়ে শিগগির দলের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে যেতে পারে। এ নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে।
এর আগে বিএনপি সমর্থক শত নাগরিকের কয়েকজন প্রতিনিধি নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বিষয়গুলো কমিশনকে জানিয়েছিলেন। তাঁরা কমিশনকে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় তিন দিন বাড়ানোর অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তা রাখা হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলেই এ অনুরোধ রাখতে পারতো। তা না করায় মনে হচ্ছে কমিশন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশও তৈরি করবে না। এরপর থেকে নির্বাচন না করার বিষয়টিও দলে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তারপরও বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ, বিশেষ করে প্রার্থী ও কর্মীদের যাতে গ্রেপ্তার করা না হয়, কমিশনের কাছে সে নিশ্চয়তা চাইবে।
বিএনপির সূত্র জানায়, এর আগে ‘শত নাগরিক’ এর প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিল। তা নিয়ে দলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়েছে। অনেকে বলেছেন, এতে বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ফুটে উঠেছে। এ অংশটিকে শান্ত রাখতে সরাসরি বিএনপির প্রতিনিধি দল কমিশনে পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। বিএনপি এখনো ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে সমর্থন দেয়নি। তবে ঢাকা উত্তর থেকে মেয়র পদে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তাঁর ছেলে তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে মেয়র পদে বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দীন আহমেদ পিন্টু ও বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল বাশারের মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।
বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তারা নির্বাচনে থাকতে চায়। কিন্তু নেতা-কর্মীদের নামে মামলা থাকায় গ্রেপ্তারের আশঙ্কা দলটিকে ভাবাচ্ছে বেশি। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য রিপন ছাড়া আর কেউ সশরীরে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাননি। তাঁদের মধ্যে নাসির উদ্দিন কারাগারে। এ ছাড়া মির্জা আব্বাস, এম এ সালাম, আবদুল আউয়াল মিন্টু-এঁরা সবাই গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। এ অবস্থায় তাঁরা কীভাবে নির্বাচনী প্রচারে নামবেন, তা এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ তাঁদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে এক বা একাধিক মামলা আছে। একই অবস্থা ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও। তা ছাড়া তাঁদের হয়ে যেসব নেতা-কর্মী কাজ করবেন, তাঁদের একটি বড় অংশ আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের অনেকে মামলার আসামি। এ ছাড়া অনেক মামলা আছে যেখানে আসামিদের একটি অংশ অজ্ঞাতনামা। যাঁদের নামে মামলা নেই তাঁরা ভয় পাচ্ছেন এসব মামলাকে। এ অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হবে না-এমন নিশ্চয়তা না থাকলে সবাইকে মাঠে নামানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকেরা। তাঁরা চান, অন্তত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না, এমন নিশ্চয়তা।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি সরাসরি না হলেও শত নাগরিকের প্রতিনিধি দল কিছু দাবি নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরেছে। ওই প্রতিনিধি দলে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাও ছিলেন। কিন্তু কমিশন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ভয়ে আতঙ্কে প্রার্থীরা সশরীরে মনোনয়নপত্র জমা দিতেও যেতে পারেননি। তারপরও বিএনপি বিভিন্নভাবে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। কিন্তু সরকার কোনোভাবেই এগিয়ে আসছে না।
দলীয় একাধিক নেতা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন জমা দিলেও এখন পর্যন্ত তাঁদের কাউকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সূত্র জানায়, প্রার্থী বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি অপেক্ষা করবে। দলটির আশঙ্কা কারও কারও প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। যাঁরা বৈধ প্রার্থী হিসেবে থাকবেন তাঁদের মধ্য থেকে সমর্থন দেওয়া হবে।
মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন নিয়েছেন এমন একজন প্রার্থী বলেন, দলীয় সমর্থন কাকে দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। কার কার আবেদন শেষ পর্যন্ত বৈধ থাকবে তা দেখার বিষয়। দলের চেয়ারপারসন সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এ জন্যই একাধিক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।