সম্পদ ও মামলা দুটিতেই এগিয়ে মির্জা আব্বাস
আজমী আনোয়ার, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সম্পদ ও ফৌজদারি মামলা—ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ দুটিতেই এগিয়ে। তাঁর সম্পদের পরিমাণ শত কোটি টাকার বেশি।
বর্তমানে মির্জা আব্বাসের নামে ৩৭টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২২টিই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের দুই মেয়াদে হয়েছে। অতীতে তাঁর নামে ২৪টি মামলা ছিল। সেগুলো থেকেও তিনি অব্যাহতি বা খালাস পেয়েছেন।
অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সম্পদের পরিমাণ অর্ধশত কোটি টাকার মতো। অতীতে তাঁর নামে পাঁচটি মামলা থাকলেও তা এখন আর নেই। সবকটি থেকেই তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে হলফনামায় কোন সরকারের আমলে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তা দুজনেই উল্লেখ করেননি।
টেলিফোনে এ বিষয়ে সাঈদ খোকনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। আর মির্জা আব্বাস তাঁর পুরোনো মামলা থেকে কবে কোন সরকারের সময়ে অব্যাহতি পেয়েছেন, তা তাঁর আইনজীবী জানাতে পারেননি।
মির্জা আব্বাসের বাৎসরিক আয় ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ও দোকানভাড়া থেকে আয় ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র আমানত থেকে ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তাঁর স্ত্রীর আয়ের প্রায় ৪৯ লাখ টাকা আসে শেয়ার ও ব্যাংক আমানত থেকে।
মির্জা আব্বাসের নিজের নামে অস্থাবর সম্পদ আছে ৯১ কোটি টাকার। এর মধ্যে নগদ আছে ৫০ লাখ টাকা। ঢাকা ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ৭৮ কোটি টাকা। আরও বিনিয়োগ আছে ১০ কোটি টাকার মতো। আর স্ত্রীর নামে আছে ১৩ কোটি টাকার সম্পদ। এর মধ্যে ঢাকাফোনে শেয়ারের দাম ১০ কোটি টাকা। সোনা আছে ২২ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ঢাকায় বাড়ি ও অকৃষি জমির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। বিভিন্ন খাতে মির্জা আব্বাসের দায়-দেনার পরিমাণ প্রায় ৭৬ কোটি টাকা। মির্জা আব্বাসের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক।
মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ, সাঈদ খোকন প্রপার্টিজ লিমিটেড, ইন্দো জে এস এ ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ, থ্রি এ হোটেল অ্যান্ড প্লাজা, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস অ্যান্ড এস করপোরেশন ও ঢাকা ট্রেডার্স।
সাঈদ খোকনের আয়ের উৎস হচ্ছে বাড়ি ও দোকানভাড়া বাবদ ৩২ লাখ ৩৪ হাজার ১৫০ টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৩০ টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে আয় ১ লাখ ৮ হাজার টাকা।
খোকনের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৮ টাকা। নিজ নামে ব্যাংকে জমা আছে ৪৩ হাজার ৪৭৬ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। পুঁজিবাজারে নিজ নামে রাখা শেয়ারের দাম ১৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে রাখা শেয়ারের দাম ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। মোটরগাড়ির দাম ৩৮ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকার বাড়ি, যা তিনি পৈতৃক সূত্রে পেয়েছেন। প্রিমিয়ার ব্যাংক বনানী শাখায় তাঁর ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ১৯ কোটি ২৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক।
কারাগারে আটক বিএনপির নেতা নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টুর নামে বর্তমানে ফৌজদারি মামলার সংখ্যা চারটি। অতীতে তাঁর নামে দুটি ফৌজদারি মামলা ছিল। তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আশা এন্টারপ্রাইজ ও ডায়মন্ড থ্রেড ইন্ডাস্ট্রিজ। আয়ের উৎস বাড়িভাড়া বাবদ ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
নাসির উদ্দীনের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৭২ লাখ ৭৮ হাজার টাকার শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র। নগদ টাকার পরিমাণ ৫ কোটি ৯২ লাখ ৬৮ হাজার, ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকার বন্ড, স্থায়ী আমানত ৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গাড়ি ও আসবাবপত্রের দাম ১ কোটি টাকা। স্থাবর সম্পদের আর্থিক দাম ৩ কোটি ৭২ লাখ ৭১ হাজার টাকা। স্ত্রীর দায়দেনার পরিমাণ ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড স্পিনিং মিলসের নামে ৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।
জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বার্ষিক আয় ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আয়ের উৎস বাড়িভাড়া ও ব্যবসা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নগদ ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ১৭ লাখ টাকা মূল্যমানের মার্সিডিস বেঞ্জ, টয়োটা প্রাডো ও মিতসুবিসি পাজেরো গাড়ি। তাঁর ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালামের বিরুদ্ধে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাজধানীতে তিনটি মামলা হয়। সবগুলোই নাশকতার মামলা। এর মধ্যে দুটি মামলা হয়েছে বিস্ফোরক আইনে, অন্যটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে।
আবদুস সালামের বাৎসরিক আয় সাড়ে চার লাখ টাকা। বাড়িভাড়া ও দোকানভাড়া থেকে এই অর্থ পান তিনি। তাঁর স্ত্রী ও অন্য নির্ভরশীলদের কোনো আয় নেই। তাঁর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ও ব্যাংকে জমা করা টাকার পরিমাণ ৫১ লাখ। গয়না আছে ৩৫ হাজার টাকার। আর তাঁর স্ত্রীর কাছে আছে ১২ তোলা সোনা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তাঁর একটি ছয়তলা বাড়ি এবং ৪২ শতাংশ অকৃষি জমি আছে। আর স্ত্রীর নামে আছে একটি ফ্ল্যাট। একটি গাড়ি কেনার জন্য তিনি প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।