কামারুজ্জামানের রায়ের কপি কারাগারে
মনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায়ের কপি আজ বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র এ কথা জানায়।
এর আগে বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতি কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায়ে সই করেছেন। এরপর বিকেলে তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল থেকে সন্ধ্যায় এই কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
বিকেলে ডিআইজি (প্রিজন) গোলাম হায়দার জানান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায়ের স্বাক্ষরিত কপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে আজ বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রায়ের চূড়ান্ত কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসবে।
গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ আপিল বিভাগের চার বিচারপতি এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, এখন মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পেতে হলে কামারুজ্জামানকে একমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করলে তবেই মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাবেন তিনি।
কারা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, আইন অনুসারে রায়ের অনুলিপি হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে তা কামারুজ্জামানকে পড়ে শোনানো হবে। এরপর তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। তিনি যদি প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করতে চান, তবে সেই প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির রায় কার্যকর করা যাবে না। আর তিনি যদি প্রাণভিক্ষা চাইতে রাজি না হন, তাহলে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। এরপর মন্ত্রণালয় ফাঁসির দিনক্ষণ ঠিক করে দেবে।
কারা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের উপমহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারে ফাঁসির রায় কার্যকরের দিনক্ষণ ঠিক করার ক্ষমতা সরকারের। তবে সরকার যদি কারা প্রশাসনকে কারাবিধি অনুসারে ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেয়, তাহলে রায় পড়ে শোনানোর পর থেকে আসামি সাত দিন সময় পাবেন। এরপর রায় কার্যকর করা হবে।
কারা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, নিয়ম অনুসারে ফাঁসির রায় কার্যকর করার সময় কারা প্রশাসনের মহাপরিদর্শক, কারা তত্ত্বাবধায়ক, জেলার, ঢাকা জেলা প্রশাসক বা তাঁর প্রতিনিধি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বা তাঁর প্রতিনিধি, পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার এবং ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন উপস্থিত থাকবেন। ফাঁসি কার্যকর করার পর মৃতদেহটি ২০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এদিকে, রায় কার্যকর করার জন্য গত সোমবার থেকে ফাঁসির মঞ্চ পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কারা প্রশাসন ইতিমধ্যে এক দফা মহড়াও দিয়েছে। সোমবার দুটি বালুর বস্তা দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে, ৮২ কেজি ওজনের ব্যক্তিকে ঝোলানো সম্ভব কি না। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মোট ১৬টি ফাঁসির রশি আছে, এর একটি নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। যে ছয়জন জল্লাদ এখন কারাগারে আছেন, তাঁদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তাঁদের যেকোনো তিনজনকে নেওয়া হবে। তবে ফাঁসি কার্যকরের মাত্র এক ঘণ্টা আগে জল্লাদদের এসব তথ্য জানানো হয়ে থাকে।
প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী বলেন, আদেশ পাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।
দণ্ডিত ব্যক্তিকে ফাঁসি দেওয়ার সময় তাঁর শেষ ইচ্ছা কী, তা জানতে চাওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, এটা সিনেমা-নাটকে আছে, জেল কোডে শেষ ইচ্ছা জানতে চাওয়ার কোনো বিধান নেই। তবু প্রথা অনুসারে কিছু বলার আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়।
একাত্তরে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে ১৪৪ জনকে হত্যা ও নারী নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে আসামিপক্ষ। গত বছরের ৩ নভেম্বর সোহাগপুর হত্যাকাণ্ডের দায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে ৫ মার্চ তা পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন কামারুজ্জামান। দুই দফা শুনানি পেছানোর পর গত রোববার আপিল বিভাগে ওই আবেদনের শুনানি হয়।