মিডিয়ার ওপর প্রার্থীদের যত ক্ষোভ
মনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মতবিনিময় সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানতে চায় নির্বাচন কমিশন। তবে মতামত দিতে দাঁড়ানো বেশির ভাগ সদস্য প্রথমেই বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম যে প্রক্রিয়ায় শুধু কয়েকজন ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তাঁদের বক্তব্য, সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের যে দাবি তা গণমাধ্যমগুলোই মানছে না। তাঁদের দাবি, সব প্রার্থীর প্রতি সমান নজর দিতে হবে গণমাধ্যমকে। নির্বাচন কমিশন যাতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় সে আহ্বানও জানান তাঁরা।
আজ রোববার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সভাতে গণমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেলা ১১টা থেকে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রথম মতামত ও নিজেদের সমস্যা জানানোর জন্য দাঁড়ান মেয়র পদপ্রার্থী মো. আনিসুজ্জামান খোকন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি একজন প্রার্থী। আর আমার বউ বলে, ‘‘ভণ্ডামি শুরু করছ। এত টেলিভিশন, কিন্তু তোমার চেহারা দেখি না’’। অবস্থা দেখে মনে হয় মাত্র দু-একজন নির্বাচন করছেন।’
আনিসুজ্জামান খোকনের বক্তব্যের পর অন্যান্য প্রার্থীরাও হাততালি দিয়ে এ বক্তব্যকে সমর্থন করেন।
আরেক মেয়র পদপ্রার্থী শেখ শহিদুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমে আমরা প্রেস রিলিজ দেওয়ার পরও কোনো সাড়া পাই না। আমাদের বক্তব্যও যাতে সমানভাবে জনগণের কাছে পৌঁছায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
মেয়র পদপ্রার্থী মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা মিডিয়াতে স্থান নির্ধারণ করে দেন। সুনির্দিষ্ট স্থানের বাইরে কোনো প্রচারের দরকার নেই।’
মেয়র পদপ্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ বলেন, ‘বিটিভি, সেও দু-একজন প্রার্থীর নাম বলার পর আর বলে না। একই ভাবে অন্যান্য মিডিয়াও অনেকেরই নাম বলে না।’
আরেক মেয়র পদপ্রার্থী মো. সামছুল আলম চৌধুরী জানালেন, এবার যে পদ্ধতিতে পোস্টার ছাপাতে হচ্ছে তা একটু বৃষ্টি হলেই ছিঁড়ে যাচ্ছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মিডিয়াতে আমার নাম আসে না। পোস্টারই আমার ভরসা। তবে মিডিয়া আমাকে একদিন খুঁজে বের করবেই।’
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আনিসুল হকও সব গণমাধ্যম যাতে সব প্রার্থীকে সমান গুরুত্ব দেয় সে আহ্বান জানান।
বেশির ভাগ গণমাধ্যম ‘হেভিওয়েট’ বা বড় দল সমর্থিত প্রার্থীদের পেছনে ছুটে তার প্রমাণ পাওয়া গেল এ মতবিনিময় সভাতেই। মেয়র পদপ্রার্থীদের মতামত জানানো শেষ হলে আনিসুল হক, বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়াল, মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন এক সঙ্গে চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়ান। তখন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্যামেরার মধ্যে বেশির ভাগ ক্যামেরা সেখানে ছুটে আসে। কেউ কেউ সেখানেই মেয়র পদপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। তখন সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের মতামত জানানো শুরু হয়েছে। মঞ্চে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য অতিথিরা বসে নারী প্রার্থীদের কথা শোনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মঞ্চের সামনে জটলা শুরু হওয়ায় পুরো মিলনায়তনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তখন মঞ্চ থেকে একজন বলতে বাধ্য হন-‘মেয়র পদপ্রার্থী আপনারা বসুন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আপনাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।’ তবে মঞ্চের সে আহ্বান মেয়র পদপ্রার্থীদের আটকাতে পারেনি। সেই প্রার্থীরা বাইরে বের হলে গণমাধ্যমের ক্যামেরা আবার ছুট লাগায়। বাইরে সেই প্রার্থীদের ক্যামেরার সামনে আবার বক্তব্য নেন।
সাধারণ আসনের এক কাউন্সিলর বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেই ফেললেন, ‘এঁরা মেয়র নির্বাচিত হয়ে কী করবেন? প্রধান নির্বাচন কমিশনার কথা বলবেন, অথচ প্রার্থীরা বের হয়ে গেলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আপনি আপনার কথা কাকে শোনাবেন? ’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও সভা শেষে বক্তব্যে বিটিভিসহ গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সব প্রার্থীর নাম, প্রতীক, এলাকা প্রকাশ করার জন্য আহ্বান জানান।