কাউকে হয়রানি না করতে পুলিশকে বললেন সিইসি
আজমী আনোয়ার, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নির্বাচনকে ঘিরে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। আজ রোববার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে কয়েরজন প্রার্থীর করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি এই নির্দেশ দেন।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেলা ১১টা থেকে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমি পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিচ্ছি অযথা যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছি আনন্দমুখর পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীকে সবাই যাতে ভোট দিতে পারেন সে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে।’
বিএনপি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল সভায় বলেন, ২০-দলীয় জোট ও আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের অনেক কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে এবং অনেকে পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে আছেন। যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাঁদের জামিনের ব্যবস্থা করাসহ একটি স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।
মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফী উল্লেখ করেন, মনোনয়নপত্র গ্রহণের দিন ভোরে তাঁর বাসায় পুলিশ এসেছিল। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বসে আনিসুল হককে প্রার্থী ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে বলেছিলাম। আমি জানি না পুলিশ সে কারণে বা কেন আমার বাসায় এসেছিল। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে যাতে হয়রানি না করা হয়, সে আহ্বান জানাচ্ছি।’
সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী পেয়ারা মোস্তফা জানান, গতকাল শনিবার নির্বাচনী প্রচার শেষে মহাখালী থেকে তাঁর এক কর্মীকে বনানী থানায় আটক করা হয়। পরে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টার পর তাঁকে ছাড়িয়ে আনা সম্ভব হয়।
মেয়র পদপ্রার্থী মো. জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘৭ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর কথা থাকলেও অনেক প্রার্থী তার আগে থেকেই প্রচার চালিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন আশ্রয়ের জায়গা। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার সাংবিধানিক দায়িত্ব কমিশনের রয়েছে। তবে কমিশন এ বিষয়ে কোনো প্রতিকার করেনি। আর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন, তা আমরা সবাই জানি।’
মেয়র পদপ্রার্থী মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভোটারপ্রতি যে খরচ নির্ধারণ করা আছে, তা যথাযথভাবে খরচ হচ্ছে কি না, ৫০ লাখ ৫০ কোটিতে পৌঁছাচ্ছে কি না, এসব বিষয় নজরদারি করার জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ‘সিটিজেন পার্টিসিপেশন’ কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। কেননা, নির্বাচন যাতে বিত্তবানদের লড়াইয়ে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
আরেক মেয়র পদপ্রার্থী অভিনেতা নাদের চৌধুরী কমিশনের কাজের মধ্যে সমন্বয় নেই বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া কমিশনের কমিশনাররা যাতে ‘সতর্ক’ হয়ে বক্তব্য দেন সে আহ্বানও জানান।
সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী তুষার আহমেদ বলেন, ‘বাসা থেকে পালায়ে মতবিনিময় সভায় আসছি। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। ছেলেমেয়েকে মারার হুমকি দিচ্ছে। জীবন বাঁচাব, না নির্বাচন করব? ’
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি চাই লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করতে। আজকের মতবিনিময় সভার প্রার্থীদের কাছ থেকে আসা দাবিগুলোর বেশির ভাগই কমিশন মেনে নেবে।’
মতবিনিময় শেষে বক্তব্যে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ আবারও বললেন, অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সভার শুরুর দিকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। প্রার্থীদের আশ্বস্ত করতে চাই, আচরণবিধির কোনো লঙ্ঘন আমরা হতে দেব না। প্রার্থী বা অন্য কেউ তা লঙ্ঘন করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “ফেস্টিভ মোড”-এ নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি এবং এলাকার প্রভাবশালীদের দিকে নজর রাখছি।’
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘কোনো প্রার্থীর যদি নিরাপত্তাজনিত সংশয় থাকে বা অস্বস্তিবোধ করেন, আইনের ব্যত্যয় দেখতে পান তাহলে হয়, কমিশনের না হয় আমাদের নজরে আনবেন।’
ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনিসুর রহমান জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশন পুরোপুরি প্রস্তুত।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম। এতে নির্বাচন কমিশনের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, মো. জাবেদ আলী ও মো. শাহ নেওয়াজ বক্তব্য দেন।