নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকবে: সিইসি
মেহেদী আজাদ মাসুম, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে বা শৈথিল্য প্রদর্শন করা হলে তা বরদাশত করা হবে না, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে নির্বাচন নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানোর জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিইসি তাঁর এ নির্দেশনার কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান এবং গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সংবাদ সম্মেলনে সিইসি ভোটারদের আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, ভোটাররা নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। ভোটে জনগণের রায় মেনে নেওয়ার জন্য প্রার্থীদের তিনি আহ্বান জানান। কোনো প্রার্থী বা তাঁর সমর্থক যাতে বেআইনি কোনো কাজ না করেন, সংক্ষুব্ধ হলে আইনের আশ্রয় নেন সে আহ্বানও জানান।
বৈশাখী শুভেচ্ছা এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে সিইসি বক্তব্য শুরু করেন। তিনি জানান, এবারের নির্বাচন নিয়ে ভোটার এবং নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচনকে বিশাল কর্মযজ্ঞ হিসেবে উল্লেখ করে সিইসি জানান, ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন।
ভোটারদের মানসিক স্বস্তির জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে সিইসি উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করবে এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা যখনই ডাকবেন তখনই দ্রুত সেখানে পৌঁছে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে।
কোন পরিস্থিতি হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা সেনাবাহিনীকে ডাকবে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে করা এ প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, মারপিট হলে পুলিশ বিজিবি ফেল করলে বা তারা দূরে থাকলে রিটার্নিং কর্মকর্তা সেনাবাহিনী ডাকবেন।
সব প্রার্থীদের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বাস্তবায়িত হচ্ছে না বা সমান সুযোগ পাচ্ছেন না এ বিষয়ে এক গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নে সিইসি হেসে দেন। তিনি বলেন ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে অনেক শুনেছি।’ সিইসি বলেন, মেয়র পদপ্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাঁরা খুব ভালোভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন। এটাই প্রমাণ করে সব প্রার্থীর বেলায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বাস্তবায়িত হয়েছে। দুই চারটা ক্ষোভ সবারই থাকে। যে ছোটখাটো অভিযোগ পাওয়া গেছে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সব প্রার্থীই সমান সুযোগ পাবেন।
সিইসি ভোটারদের আশ্বস্ত করছেন, তবে মেয়র প্রার্থীসহ কিছু প্রার্থী হামলার শিকার এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। বিজিবি মাঠে নেমে গেছে। ঘনঘন টহল দিচ্ছে। তবে কেউ চোরাগোপ্তা বা পেট্রলবোমা হামলা করলে তাদের ধরা যায় না। প্রার্থীদের হামলার বিষয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে বলেছি।’
বক্তব্যে সিইসি গণমাধ্যমকে স্বাধীন বলে উল্লেখ করেন। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের নিজের মনের কাছে, পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান।
গণমাধ্যম স্বাধীন, কিন্তু কমিশন কী স্বাধীন এ ধরনের প্রশ্নে সিইসি সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘আপনারা (গণমাধ্যম) এবং ভোটাররাই বিবেচনা করবে কমিশন স্বাধীন কি না।’
পর্যবেক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘হুট করে কেউ এসে বললেই হবে না। এ জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। যাচাই বাছাই করেই তা করা হয়।
এবার তিন সিটি নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানান সিইসি। তিনি জানান এবার মেয়র পদপ্রার্থী ৪৮, সংরক্ষিত আসনের ২৪৯ এবং সাধারণ আসনে ৮৯১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন করছেন। সব মিলে মোট প্রার্থী ১ হাজার ১৮৮ জন। তিন সিটিতে মোট ভোটার ৬০ লাখ। নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালনের জন্য শুধু ঢাকা মহানগরীতেই চার হাজারের বেশি সাংবাদিক কার্ড দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৮০ হাজার সদস্য তিন সিটি করপোরেশনে ভোটের আগের দিন, ভোটের দিন এবং পরের দিন দায়িত্ব পালন করবেন।