সরকারের মরিয়া উদ্যোগে হতবাক বিএনপি

bnp-logoমনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ তিন সিটি নির্বাচনে দল-সমর্থিত প্রার্থীদের জেতাতে ‘সরকারের মরিয়া উদ্যোগে’ হতবাক হয়ে গেছে বিএনপি। একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে দল-সমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্ট এবং নেতা-কর্মীদের অনুপস্থিতিও অবাক করেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে।
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ও মাঝারি পর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতাসীনেরা কিছু অনিয়ম-কারচুপি করবে বলে ধরে নেওয়া হয়। তার পরও তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন, বড় দুই শহরে জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নজরদারির মুখে সবার অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন পরিস্থিতি বজায় থাকবে। কিন্তু সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি এতটাই ‘প্রতিকূল’ ও ‘একতরফা’ হয়ে উঠবে, তা তাঁরা ভাবতে পারেননি।
গতকাল ঢাকায় সারা দিনে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭৯টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তাতে মাত্র ৬৬টি কেন্দ্রে দিনের কোনো না-কোনো সময় বিএনপি-সমর্থিত দুই মেয়র পদপ্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টদের দেখা গেছে।
একইভাবে চট্টগ্রামে ১২৭টি কেন্দ্রে এ সময় প্রায় ১০০টি কেন্দ্রেই বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীর কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত এক একটি প্রতিষ্ঠানে এক থেকে ছয়টি পর্যন্ত কেন্দ্র ছিল।
বিএনপির প্রকাশ্য অভিযোগ হচ্ছে, তাদের সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের বেশির ভাগকে কেন্দ্রে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। তবে একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন, প্রার্থীর নির্ধারিত এজেন্ট ও দলের নেতা-কর্মীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী কেন্দ্রে যাননি। অবশ্য এর জন্য তাঁরা মামলা ও পুলিশি ভয়ভীতিকেই দায়ী করেছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটিতে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন সমন্বয়কারী মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলাম, পুলিশ ও র্যাবের সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশন নীলনকশার নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। এ-ও বলেছিলাম, কালই এর সত্যতা দেখব। ঢাকাবাসী গতকাল তাই দেখেছে।’
সিটি নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের ঠেকাতে নির্বাচনে পুলিশ, র্যাবসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার ও ভোটকেন্দ্রে সরকার-দলীয় নেতা-কর্মীদের শক্তি প্রয়োগের ঘটনা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনকেও ছাড়িয়ে গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণের নির্বাচন সমন্বয়কারী আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে যত স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে, সে নিরিখে এটা কোনো নির্বাচনই না। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনকেও এটি হার মানিয়েছে।’
তবে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এ-ও স্বীকার করেন, নির্বাচনে জিততে ‘সরকারের মরিয়া কৌশল’ মোকাবিলায় ভোটকেন্দ্রে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো অবস্থানই ছিল না। ৯০ ভাগ কেন্দ্রেই দল-সমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্ট যাননি। অথচ, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নেতা-কর্মী ও ঢাকাবাসীকে সকাল সকাল ভোট দেওয়া এবং ফল গণনা পর্যন্ত কেন্দ্রের আশপাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আন্দোলনে ব্যর্থতার পর নির্বাচনে অংশ নিয়েও কেন্দ্রে যেতে ভয় পাওয়াকে দলের বড় দুর্বল দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন নেতারা।
বিএনপির এই দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন-পরিস্থিতি যতটা খারাপ হয়েছে, এজেন্ট ও নেতা-কর্মীরা দলবলে কেন্দ্রে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো। এতে সরকারের নগ্নতা আরও ভালোভাবে প্রকাশ পেত।
অবশ্য তিন সিটিতে পরাজয় বা মাঝপথে নির্বাচন বর্জনের ঘটনায় দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে তেমন আক্ষেপ বা হতাশা দেখা যায়নি। নেতারা বলছেন, বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এত দিন যে আন্দোলন করছে, গতকালের সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এর যৌক্তিকতা আরও জোরালো হয়েছে। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ‘ভুল’ ছিল বলে এত দিন দলের ভেতরে-বাইরে যে সমালোচনা ছিল, তাও কাটানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান বলেন, এই নির্বাচন প্রমাণ করেছে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়াটা সঠিক ছিল।
আর দলের নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের এমন একজন উপদেষ্টা গতকাল বলেন, ‘এত দিন আমরা দুনিয়ার কাছে বলেছি, এই সরকারের অধীন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। সিটি নির্বাচনে তা শতভাগ প্রমাণিত হয়েছে।’
এ অবস্থায় বিএনপি এবার ধীরেসুস্থে আন্দোলনে নামতে চায়। তাই সিটি নির্বাচনে ‘কারচুপির প্রতিবাদে’ এখনই হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে চায় না দলটি। তবে আদর্শ ঢাকা আন্দোলন আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান তুলে ধরতে পারে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ