চার হাজারের নিচে ডিএসইর সূচক
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সপ্তাহের প্রথম দিন আজ সোমবার ধাক্কা খেলেন বিনিয়োগকারীরা। আজও দরপতন অব্যাহত ছিল শেয়ারবাজারে। আগের দিন বৃহস্পতিবারের ধারাবাহিকতায় আজ সূচকের বড় পতন হয়েছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে। পাশাপাশি কমেছে লেনদেনও।
বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অব্যাহত দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় অনেক বিনিয়োগকারী বাজার আরও নেমে যেতে পারে এই ভয়ে তাঁদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেকে রয়েছেন নিষ্ক্রিয়। এর জন্য অনেকে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করছেন। কেননা অনেকে মনে করেছিলেন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। কিন্তু গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচন বয়কট করেছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে এমনটিই মনে করছে সাধারণ মানুষ। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের শেয়ারবাজারে। যদিও নির্বাচনের আগের দিন সোমবার দুই স্টক এক্সচেঞ্জে সামান্য সূচক বেড়েছিল। তবে বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এটি ছিল অনেকটা কৃত্রিম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, বাজারে বিভিন্ন ধরনের গুজব শোনা যাচ্ছে। এ অবস্থায় দরপতন ঠেকাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে যে সাপোর্ট প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার স্বাভাবিক সাপোর্ট থেকে বঞ্চিত হওয়ায় দরপতন আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক জায়গাও বারবার ধাক্কা খাচ্ছে। ডিএসইর প্রধান সূচক আজ চার হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা আরও বেড়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই, বিক্রেতা বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে আইপিওর মাধ্যমে বাজারে নতুন কোম্পানি ঢুকেছে, সেই অনুপাতে টাকা বাজারে ঢোকেনি। ফলে ধীরে ধীরে বাজারে আস্থাহীনতা বেড়ে যাচ্ছে। এর পেছনে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করছেন তিনি। তাঁর মতে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। অর্থনীতির জন্যও এটা দরকার। এ ছাড়া শেয়ারবাজার নিয়ে সরকারের নীতিগত কিছু সহায়তা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ বা ৮৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৩ হাজার ৯৫৯ পয়েন্টে। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসইতে ডিএসইএক্স সূচক চালু হয়। এদিন ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট থেকে এ সূচকটির যাত্রা শুরু হয়। সূচকের আজকের এই অবস্থান তার থেকে নিচে নেমে এসেছে। যদিও ২০১৩ সালের মার্চে ও নভেম্বরে সূচক চার হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গিয়েছিল।
অপর স্টক এক্সচেঞ্জে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক আজ ২১৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২ হাজার ২০৯ পয়েন্টে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্স সূচক কমেছিল ৫০ পয়েন্ট আর সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক কমেছিল ২১৭ পয়েন্ট।
ডিএসইতে আজ ৩০৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২১৮ টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে ৬৮ টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। ডিএসইতে গতকাল ৩৩০ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ৫২ কোটি টাকা কম। আগের দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৩৮২ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
অন্যদিকে সিএসইতে আজ ২২০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪ টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে ৪৪ টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। সিএসইতে আজ ২৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৭ কোটি টাকা কম। আগের দিন এই স্টক এক্সচেঞ্জে ৪২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।
ডিএসইতে আজ লেনদেনে শীর্ষে ছিল ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। আজ প্রতিষ্ঠানটির ৩৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এ ছাড়া লেনদেনে শীর্ষে থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে এসিআই ফর্মুলেশন, এসিআই, স্কয়ার ফার্মা, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, ইফাদ অটোস, বিএসআরএম স্টিল, গ্রামীণফোন, কেপিসিএল, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড প্রভৃতি।