যত্রতত্র মূত্রপাত ঠেকাতে আরবি !

Arabic Urin Writingআজমী আনোয়ার, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ এখানে প্রস্রাব করবেন না’—বিভিন্ন দেওয়ালে এ ধরনের লেখা থাকার পরও ঠিক সে জায়গাতে; এমনকি সেই ‘সতর্কবার্তা’র ওপরই অনেকে প্রস্রাব করছেন। অর্থাৎ এ নিষেধাজ্ঞাকে তেমন একটা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।

বাংলা লেখাকে আমলে না নিলেও ৯০ শতাংশের বেশি মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশের মানুষ আরবি লেখাকে নিশ্চয়ই আমলে নেবে। এ ধরনের চিন্তা ভাবনাকে সামনে রেখে নগরের বিভিন্ন দেওয়ালে বাংলার স্থলে আরবিতে যেখানে সেখানে প্রস্রাব করার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এ বিষয়ে একটি ভিডিও বার্তাও দিয়েছেন। ভিডিও বার্তাটি মূলত ইংরেজি ভাষার। তবে ধর্মমন্ত্রী বাংলায় বলেছেন, ‘ঢাকা মসজিদের নগরী। আমি তো উপলব্ধি করতে পারি যে প্রতিটি মসজিদে বাথরুমের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও যেখানে লেখা থাকে “এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ” সেই জায়গাতে দেহি (দেখি) তারা অনেক সময় প্রস্রাব করে।’
ভিডিওচিত্রের শেষে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা যদি কনটিনিউ করা হয়, তাহলে এটা প্রকৃতপক্ষেই এক শ পারসেন্ট সাকসেসফুল হবে ইনশা আল্লাহ।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে এ ভিডিও বার্তার পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন আলোচনাও চলছে। নগরের বিভিন্ন দেওয়ালে আরবি লেখা দেখা যাচ্ছে। অনেক জায়গায় আবার কেউ কেউ তা মুছেও ফেলেছেন।
তবে এটি ধর্মমন্ত্রীর নিজস্ব উদ্যোগ না ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ উদ্যোগ নিয়ে দুই মিনিটের তথ্য বা ভিডিও চিত্রটিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ বলা হয়েছে। ভিডিও বার্তায় এ ধরনের কনসেপ্ট মন্ত্রণালয়ের একটি ইউনিক কনসেপ্ট বলেই উল্লেখ করা হয়েছে।
ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান বলেন, ‘আমি আর আমার ছেলে মিলে এ উদ্যোগ নিছি। সিটি করপোরেশনকে এ বিষয়ে একটি ডিও লেটার দিছি। সিটি করপোরেশন থেকে এ ব্যাপারে এখনো কিছু জানায়নি।’
এ উদ্যোগটি মন্ত্রণালয় না মন্ত্রীর নিজস্ব উদ্যোগ এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান, তিনি উদ্যোগটি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, ‘আমি তো এ মন্ত্রণালয়েরই মন্ত্রী।’
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ ভিডিও বার্তা বা এ সংক্রান্ত কিছু বলা নেই। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান টেলিফোনে বলেন, ‘এটি মন্ত্রণালয়ের কোনো কার্যক্রম বা বিষয় নয়। এটি মন্ত্রীর নিজস্ব উদ্যোগ।’
সচিব বিষয়টি নিয়ে ‘মতামত দিতে পারি না’ বলেও উল্লেখ করেন। তবে তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে বিতর্ক তৈরির কিছু নেই। আরবি লেখা দেখলে জনগণ শ্রদ্ধায় সে জায়গায় প্রস্রাব করবে না। এটা সিটি করপোরেশনের নগর পরিচ্ছন্নতা অভিযানকে সহায়তা করবে।
মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রীর বক্তব্যসহ ভিডিওটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই ধারণ করা হয়েছে। ১ মে এটি অনানুষ্ঠানিকভাবে আপলোড করা হয়েছে। ভিডিও নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক না নেতিবাচক তা যাচাই করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেওয়ালে আরবি লেখা শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একসঙ্গে বসে এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করেছেন। টেলিভিশন চ্যানেলে এ ভিডিও বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এ উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে।
ভিডিও বার্তায় দেখানো হয়েছে, আরবি লেখার নিচেই বাংলায় নিকটস্থ মসজিদ বা পাবলিক টয়লেটের অবস্থান দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বসে পড়েও দেওয়ালে আরবি হরফ দেখে কেউ কেউ প্রস্রাব না করেই উঠে চলে যাচ্ছেন। আবার অনেকে প্রস্রাব করার পর আরবি হরফ দেখে অনুশোচনায় মাথা নাড়ছেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ