রাজ্যসভায় সর্বসম্মতিতে স্থলসীমান্ত বিল পাস

BSF বিএসএফআন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ভারতের রাজ্যসভায় আজ বুধবার সর্বসম্মতিতে বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত বিল পাস হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করেন। ১৮১ জন সদস্যের সবাই বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আজ রাতের মধ্যে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে বিলটি সই করিয়ে নেবে বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছেন। আগামীকাল বিলটি লোকসভায় উঠবে। পরশু লোকসভার অধিবেশন শেষ হবে।

নানা টালবাহানা শেষে সীমান্ত বিল আজ রাজ্যসভায় উঠে। রাজ্যসভার কার্য উপদেষ্টা কমিটি এই বিল নিয়ে আলোচনার জন্য তিন ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে দুই নিকট প্রতিবেশীর দীর্ঘ চার দশকের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান হতে যাচ্ছে।

সংসদীয় মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু গতকাল

বলেন, ‘আমরা বুধবার রাজ্যসভায় বিলটি পাস করিয়ে রাতে তাতে রাষ্ট্রপতির সই করানোর চেষ্টা করছি। পরদিন বিলটি লোকসভায় পেশ করা হবে। এই চুক্তি দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়িত হচ্ছিল না। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আর বিলম্ব না করে সরকার তাই প্রয়োজনীয় কাজটুকু সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ভারতের লোকসভার চলতি বাজেট অধিবেশন শেষ হচ্ছে ৮ মে। আর রাজ্যসভার অধিবেশন শেষ হচ্ছে ১৩ মে। আসামকে বাদ দিয়েই বিজেপি সীমান্ত বিলটি পাস করাতে চেয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস এতে জোরালো আপত্তি জানায়। আবার সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করাতে রাজ্যসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন দরকার। এটি বিজেপির নেই। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের চাপে পিছু হটে বিজেপি।

গত সোমবার রাতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর বাড়িতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডাকা হয়। ভেঙ্কাইয়া নাইডু ছাড়াও বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী ও আসামের বিজেপি সাংসদ সর্বানন্দ সোনোয়ালসহ রাজ্যের সব সাংসদ এতে উপস্থিত ছিলেন। আসামের বিজেপি সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যকেও জরুরি তলব করা হয়।

ওই বৈঠকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, কংগ্রেসের আপত্তির ফলে সরকার আসামকে বাদ দিয়ে সীমান্ত বিল রাজ্যসভায় পাস করাতে পারছে না। এই বিল পাস করানো না গেলে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে ওঠা সুসম্পর্ক ধাক্কা খেতে পারে। বাংলাদেশের সহযোগিতার জন্যই ছয় বছর ধরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল শান্ত রয়েছে। তা ছাড়া, বিলটি পাস হলে আসামের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ করা যাবে। এতে করে সীমান্তে অনুপ্রবেশ সমস্যা সমাধানের পথ সহজ হবে। এই বিলের সব দায় কংগ্রেসের। অতএব সেটাই হবে রাজ্য বিজেপির হাতিয়ার। রাজ্য নেতাদেরই লোকজনকে বোঝাতে হবে, কেন ও কাদের জন্য আসামকে বাদ দিয়ে এই বিল পেশ ও পাস করানো গেল না।

সোমবার রাতের এই সিদ্ধান্তের পরই মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পুরোনো সীমান্ত বিল পেশ ও পাসের বিষয়টি অনুমোদন করানো হয়। গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা আসামকে বাদ দিয়ে বিল পেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে ভেঙ্কাইয়া নাইডু জানান। তিনি বলেন, কংগ্রেসকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে এবং কংগ্রেস খুশি। ফলে ১১৯তম সংবিধান সংশোধন বিল পেশ ও পাসে আর কোনো সংশয় থাকছে না।

কংগ্রেস আমলে পেশ করা সীমান্ত বিল নতুনভাবে পেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিজেপি নেতৃত্ব আসামের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর সমর্থনও নতুনভাবে আদায় করে নেয়। ভেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, ‘আমরা রাজ্যসভার কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ ও আনন্দ শর্মাকে জানাই, আসামকে নিয়ে যে চুক্তি সম্পাদিত এবং যে বিলটি রাজ্যসভায় কংগ্রেস সরকার এনেছিল, মুখ্যমন্ত্রী সেটাই পাস করাতে চান, তা লিখিতভাবে জানানো দরকার। এর পরই মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লেখেন। সরকারও সে অনুযায়ী সেই পুরোনো বিল পাসের সিদ্ধান্ত নেয়।’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য সোমবারের বৈঠকের পর মঙ্গলবার সকালেই গুয়াহাটি চলে যান। তিনি বলেন, ‘আমাদের আর কোনো দায় থাকল না। আসামকে রেখে বিল পাসের ভালোমন্দের সব দায় এখন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর। আসামবাসীর কাছে তাঁকেই জবাবদিহি করতে হবে।’ আসামের করিমগঞ্জ থেকে নির্বাচিত বিজেপির লোকসভা সদস্য রমেন ডেকা বলেন, ‘আমরা সব সময় দেশের স্বার্থ দলের থেকে বড় করে দেখেছি। তাই এ সিদ্ধান্ত মেনেই রাজ্যে কংগ্রেসের মোকাবিলা করব। আমরা চাই, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো হোক। তবে সেই সঙ্গে চাই, অনুপ্রবেশও একেবারেই বন্ধ হোক।’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তির সমর্থন দিয়েছে। কারণ, মানুষ এটা চায়। তবে সীমান্তবর্তী এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানান মমতা। গতকাল জলপাইগুড়িতে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মমতা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা এই সীমান্ত বিলে সমর্থন দিচ্ছি, কারণ জনগণ এর পক্ষে। এমন নয় যে আমরা জনগণের ওপর তা চাপিয়ে দিচ্ছি।’

পুনর্বাসন প্যাকেজের বিষয়ে মমতা বলেন, ‘এ চুক্তির সঙ্গে আমাদের ১৭ হাজার একর জমির বিষয় জড়িত। বাড়তি ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ আমাদের এখানে আসবে। এই বিপুল মানুষের থাকা-খাওয়া, ভবন নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ, স্কুল ইত্যাদির জন্য একটি প্যাকেজ কর্মসূচির কথা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছি। এই সংখ্যক মানুষের সমস্যা আমাদের দেখতে হবে। এটি একটি মানবিক সমস্যা।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ