কর্মকর্তা বদলায় তদন্ত আর এগোয় না
মনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ তিন মাসে কাজ হয়েছে কেবল তিন বার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন। এ ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। সাংবাদিক আখতার-উল-আলমের মেয়ে ফাহমিদা আখতারের হত্যা মামলা নিয়ে এমন অভিযোগ তাঁর পরিবারের।
পুলিশ বলছে, জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত নিয়ে হতাশ নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত ময়নাতদন্ত, ভিসেরা ও ডিএনএ প্রতিবেদনই তাঁরা পাননি।
এ বছরের ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১টার দিকে ১০৫ /ডি পশ্চিম রামপুরার মহানগর প্রজেক্টের পাঁচতলায় নিজের ফ্ল্যাটে ফাহমিদা আখতারের (৪৭) হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মুখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে হাত-পা বেঁধে ফাহমিদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
ফাহমিদা আখতার পেশায় ছিলেন আইনজীবী। সাংবাদিক আখতার-উল-আলমের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর স্বামী গোলাম রব্বানী বাহরাইনে চাকরি করেন। আর একমাত্র ছেলে সিরাতুল মোস্তাকিম লেখাপড়া করেন যুক্তরাষ্ট্রে। স্বামী-ছেলে দেশের বাইরে থাকায় রামপুরার ওই ফ্ল্যাটে বেশ কিছুদিন ধরে একাই থাকতেন।
এ ঘটনায় ফাহমিদা আখতারের বড়ভাই রিজওয়ান-উল-আলম বাদী হয়ে রামপুরা থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। রিজওয়ান-উল-আলম জানান, ২৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার থেকে ৩০ জানুয়ারি সকালে যেকোনো সময় তাঁর বোনকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর দাবি, পরিকল্পিতভাবে ফাহমিদাকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ হত্যার পর তাঁর ফ্ল্যাটে লুটপাট করে প্রায় ৫০ ভরি সোনার গয়না নিয়ে যায় হত্যাকারীরা।
রিজওয়ান বলেন, ‘বুঝতে পারছি না ময়নাতদন্ত, ভিসেরা ও ডিএনএ প্রতিবেদন কেন সাড়ে তিন মাসেও পাওয়া যাচ্ছে না। ফাহমিদার মোবাইল ফোন সেটটি ঘটনার পর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।’
এই হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত করেন রামপুরা থানার উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে তদন্ত করেন সিআইডির পরিদর্শক জিয়াউল আলম। তাঁর পদোন্নতির পর তদন্তভার পান সিআইডির আরেক পরিদর্শক অনিসুর রহমান।
ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কেউ গ্রেপ্তার না হলেও তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এই তিনজনের কাছ থেকে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ধরনের তথ্য। একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে আলোচনায় তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেন।
মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা রামপুরা থানার উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, ফাহমিদাকে হত্যার পর সোনার গয়না নিয়ে গেছে হত্যাকারীরা।
দ্বিতীয় তদন্তকারী সিআইডির পরিদর্শক জিয়াউল আলমের ধারণা, পরিচিতরা হত্যা করেছে ফাহমিদাকে। তিনি বলেন, ‘আমি ফাহমিদার বাড়ি ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিচিত লোকজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত। পেশাদার খুনিরা হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে।’ জিয়াউল আলম জানান, ফাহমিদা আখতার ফ্ল্যাটে যে একা থাকতেন সে ব্যাপারে হত্যাকারীরা খোঁজ রেখেছিল।
বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আনিসুর রহমান খান জানান, কারা হত্যা করেছে তা বোঝা যাচ্ছে না। জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফাহমিদা আলমের বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আবদুর রব জানান, ২৮ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে ফাহমিদার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তিনি একাই পাঁচ তলার উঠে যান।
আবদুর রব বলেন, বাড়ির মূল গেটের একটি করে চাবি সব ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে আছে, যে যার মতো করে গেট খুলে আসা-যাওয়া করে।