ইউনূস-ফখরুল বৈঠক

fakhrulyunusরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ গ্রামীণ ব্যাংক ‘বিভক্তিকরণের’ প্রস্তাবকে ‘চক্রান্ত’ অভিহিত করে তা থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে বিএনপি।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপি গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার সকালে মীরপুরের গ্রামীণ ভবনের ইউনূস সেন্টারে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “গ্রামীন ব্যাংক ইনকোয়ারি কমিশন এই প্রতিষ্ঠানটিকে ১৯ টুকরো করার প্রস্তাব করেছে। এটা একটি ষড়যন্ত্রমূলক চক্রান্ত বলে আমরা মনে করি।”

গ্রামীণ ব্যাংক ও নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর সরকার রুষ্ট ও বিরাজভাজন হয়ে এসব করছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা সরকারের এহেন কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারকে বলব, দাম্ভিকতা পরিহার করে বাস্তবতা বুঝে চক্রান্তের পথ থেকে সরে আসুন। গ্রামীণ ব্যাংককে তার মতো করে চলতে দিন।”

বৈঠকের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের কাছে বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘কংগ্রেশনাল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন তাকে অভিনন্দন জানাতে আমি গ্রামীণ সেন্টারে গিয়েছিলাম। আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। বিএনপি গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে আছে, থাকবে- এই সমর্থনও জানিয়েছি।”

এক ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে ইউনূসের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান ফখরুল। বৈঠকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রোববার বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার অভিনন্দনপত্র মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন দলের সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক। এ সময় গ্রামীণ ব্যাংকের বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের অবস্থানে সমর্থন জানায় বিএনপি।

রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক কোনো বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করিনি। কারণ ইউনূস সাহেব রাজনীতি করেন না।”

ক্ষমতায় গেলে গ্রামীণ ব্যাংককে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সংসদে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ যে কথা বলেছেন, আমরা তাই করব।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ৮৪ লাখ নারীকে স্বচ্ছলতা দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সজীব করেছেন। এই অর্থনীতিকে আমরা ম্যাজিক ইকোনোমি বলছি। আজকে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। তার প্রতি দুর্ব্যবহার করছে সরকার।”

ইউনূসের সঙ্গে অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে দীর্ঘ দিনের সর্ম্পকের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “তিনি অর্থনীতির শিক্ষক ছিলেন। আমি অর্থনীতির ছাত্র ছিলাম। আমাদের মধ্যে সখ্যতা বহুদিনের। বিদেশে গিয়ে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের কথা বললে তারা আমাদের বাংলাদেশীদের আলাদা মর্যাদা দেয়। এই প্রজ্ঞাবান দুরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বকে সরকার পদে পদে হেনস্তা করছে।”

১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা হয়। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাকে ‘শান্তি স্থাপন’ বিবেচনা করে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে।

এরপর ২০১০ এর ডিসেম্বরে নরওয়ের টেলিভিশনে সম্প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেয়া বিদেশি অর্থ এক তহবিল থেকে অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠে, যা নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় একটি কমিশন গঠন করে সরকার। সম্প্রতি কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ব্যাংকের বর্তমান কাঠামো বদলে বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করেছে বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়।

এরই মধ্যে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, সরকার এখন গ্রামীন ব্যাংক ভেঙে দেয়ার কথা বলছে। কিন্তু দেশের মানুষ জেগে উঠলে তা পারবে না।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূসকে মহাজোট সরকারের সময়ে এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে হেরে শেষে পদত্যাগ করেন তিনি।

সরকার বলছে, ইউনূস আইন ভেঙে ওই পদে ছিলেন। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, ইউনূস সরকারের প্রতিহিংসার শিকার।

ইউনূসের অভিযোগ, সরকার গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস করে দিতে চাইছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ